শীতের দাপট শেষে, সামনে বর্ষা আসছে, আমাদের এই বাগান হচ্ছে করিমপুর চা বাগানের একটি ফাড়ি বাগান। ঝড় বৃষ্টি বাদল মাথায় নিয়ে অনেক দূর পথ পায়ে হেটে কর্মস্থলে যেতে হয়। রাস্তা পাকা হবে এই সব কথা শুনতে শুনতে আমি বুড়ো হয়ে গেছি মরেও যাবো। গত রবিবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সবাই যখন স্বাধীন বাংলার পতাকা হাতে আনন্দে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলার স্বাধ নিচ্ছে আর আমরা দি ইন্দেশ্বর ফাড়ি বাগানের সাধারণ চা শ্রমিকরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাবি জানিয়ে করিমপুর-ইন্দেশ্বর রাস্তায় একজন নারী চা শ্রমিক পাপামা নাইডু আবেগ প্রবণ হয়ে এসব কথা বলেন।
মৌলভীবাজারের রাজনগরে করিমপুর চা বাগান থেকে ইন্দেশ্বর চা বাগান পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা-পাকা করনের দাবীতে চা শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কুলাউড়া উপজেলার লুয়াইনি হতে করিমপুর ইন্দেশ্বর হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ ভায়া সিলেট পর্যন্ত রাস্তাটি কাঁচা রয়ে গেল। এমপি মন্ত্রীরা শুধু আশ্বাস দেন। কিন্তু কোনো আমলেই রাস্তাটি পাকা করা হয়নি। এমনকি ইট সলিং পর্যন্তও হয়নি। আমরা এই স্বাধীন বাংলার সাধারণ নাগরিক এই সুবিধা থেকে ও বঞ্চিত। আমরা কতটা অবহেলিত নিপীড়িত চা শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা আরো বলেন, বাগানের চা শ্রমিক শিশুদের লেখা পড়ার জন্য একটি সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা কত সুখে স্বাধীন বাংলায় বসবাস করছি!
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
এসব দাবী দাওয়া নিয়েই ইন্দেশ্বর ফাড়ি বাগানের কয়েক শত চা শ্রমিক রাস্তায় নেমেছিলো দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। চা বাগানে গিয়ে কথা হলে শ্রমিক মাখন রিকমন বলেন, আমাদের একশ বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস্তাটি কাঁচা রয়ে গেল। আমরা সকল আমলেই এলাকার এমপি মন্ত্রীদের দারস্থ হয়েছি। আশ্বাস দিলেও কোনো কাজের কাজ কিছুই করে দেননি তারা।
চা শ্রমিক সুজন পাল বলেন, বর্ষাকালে এই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। তখন আমাদের শ্রমিকরা দুর্ভোগ পোহায়, স্কুলগামী ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারেনা, নারী শ্রমিকদের কাজে যেতে কষ্ট হয়। এসব দেখে শুনে ও কি আমরা চা শ্রমিকরা স্বাধীন দেশে সুখে আছি!
স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল আহমদ বলেন, আমাদের একটাই দাবী আগামী নির্বাচনের আগে রাস্তা পাকা করন। প্রতি নির্বাচনের আগে এমপিরা আশ্বাস দেন, কিন্তু নির্বাচনের পরে আর কারো খোঁজ পাওয়া যায় না। বাগানের সহস্রাধিক শ্রমিক কাঁদার কারণে বর্ষাকালে জরুরী কাজে বাহিরে যেতে পারেন না।
মানববন্ধনে যোগ দিয়ে চা শ্রমিক শিশু অর্চি নাইডু বলে, বাগানে আমরা একটা সরকারি স্কুল চাই। আমাদের এখান থেকে সরকারি স্কুল অনেক দূরে, আমরা যেতে পারিনা। এজন্য বাচ্চার পড়ালেখার বাহিরে থেকে যায়। কতটা অবহেলিত নিপীড়িত মানুষের মাঝে আমরা দিনাতিপাত করে যাচ্ছি সে বিষয়ে সকলের নিকট আবেদন, দেখুন আমাদের জীবন যাপন নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস না হতে পারে স্বাধীন দেশে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ আমরা! কেন এই বৈষম্য অবহেলিত সে প্রশ্ন রয়ে যায় সব সময়।
ডিবিএন/এসডিআর/মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান