আজ একুশে ফেব্রুয়ারী। ভাষার জন্য বাঙালী জীবন উৎসর্গ করেছে বাহান্নর এইদিনে। একুশই স্বাধীনতার প্রথম সূর্যোদয় বাঙালীর। এই দিনকে আঘাত করেছে অপশক্তি। শহীদ মিনার ভেঙ্গে দিয়েছে উপনিবেশিক শক্তি বরংবার। স্বাধীন বাংলাদেশেও শহীদ মিনারে আঘাত হেনেছে মৌলবাদি অপশক্তি। ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে এখন পুলিশ মোতায়ন করতে হয় শহীদ মিনারে। নগ্ন পায়ে প্রভাত ফেরিতে হেটে যাওয়া ছিল বাঙালীর হৃদয়ের আহবান। শ্রদ্ধায় অবনত বঙালীর শহীদ মিনারে যাওয়া ছিল কৃষ্টি। একটি গোলাপ হাতে প্রভাত ফেরিতে যোগ দিয়েছে বস্তির মজদুর থেকে বরেন্য মানুষটিও। আবেগে মত্ত হয়ে কন্ঠ মিলিয়েছে শহীদের গানে। আবাল বৃদ্ধ বনিতার বাঙালিত্বের অপুর্ব মিলন ছিল শোকের। অন্ধকার প্রভাতে শহর জুরে মানুষের মিছিল ছিল ঐক্যের। অবিরাম হেটে গেছে শোকাহত মিছিল বাতাস বিদীর্ন করে সুরের মুর্ছনা বেজেছে ” আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী”। শহীদ মিনার চত্তরে অগনিত মানুষের চলাচল ছিল নির্ভয়ে। এখন আনুষ্ঠানিকতা হয় প্রতিযোগিতা হয় কে আগে ফুল দিবে। কার ফুল উপরে ঝুলবে, মারামারি হয় ফটো সেশন করে ছবি দেখাতে টেলিভিশনে। সমর্থ না হলে ঝুঁকি নেয়না বেদিতে যাওয়ার। এমন প্রতিযোগিতায় শ্রদ্ধা থাকে না উদ্দেশ্যটিও ব্যহত হয় কসরতে।
৬৯ এর গন অভ্যুত্থানের মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ। তার নামেই আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে আসাদ গেট। আসাদ গেট এই দিনে সজ্জিত হতে পারে পুষ্পার্ঘ দিয়ে। এমনটি হয়নি আজও। একুশ প্রেরনা ছিল বাঙালীর, স্বাধীনতার প্রথম সুর্যোদয় ছিল। সালাম, জব্বার বরকতের জন্মাস্থান হতে পারত বেদি। স্বজন হারাদের শান্তনা হতে পারত এই দিনে। পরিচয় জেনে নতুন প্রজন্ম গবেষনায় উৎসাহী হত। এমনটি হলে স্বাধীনতার ইতিহাস বিপর্যয় হতনা। সাহস পেতনা ধর্মের নামে অপশক্তি। কৃষ্টির নামে সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ ঠেকানো যেত। উদ্যোগটি নেয়নি কেউ কোন সরকারই। একুশের আনুষ্ঠানিকতা একটি দিনে বন্দি করে রেখেছে এখন। বিদেশী ভাষা জেঁকে বসেছে পাল্টে দিয়েছে কৃষ্ট বাংলার।
একুশে ফেব্রুয়ারী এখন আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। বিদেশেও পালিত হয়। প্রবাসীরা মিছিল করে পুষ্পার্ঘ ছিটিয়ে স্মরন করে শহীদদের। অস্থায়ী শহীদ মিনার গড়ে শ্বৈতপ্রবাহ উপেক্ষা করে হাজির হয় শ্রদ্ধা জানাতে শহীদদের। বিদেশীরা দেখে মুগ্ধ হয় বাঙালীর দেশ প্রেম দেখে। কিন্তু প্রবাসেও মৌলবাদি গোষ্ঠি প্রচার করে শহীদ দিবসে বেদিতে ফুল দেওয়া হারাম। প্রচারনায় তুষ্ট হয়ে বাঙালী গানের অনুষ্ঠান দেখতে যায় সেজেগুজে। শহীদ মিনারে যায়না হারামের ভয়ে। ফেসবুকের যূগে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এই হারামের প্রচারনা প্রবাসে।
বাংলাদেশেও বিদেশী শিক্ষার ছড়াছড়ি। কোমলমতি শিক্ষাত্রীরা ষষ্ঠ ঋতু জানেনা হেলোয়ীন পালন করে ঘটা করে। ক্রিষ্টমাসের ছুটিতে বার্গার খায় রেস্তোরায় বসে। বাংলা ভাষা তরুনদের কাছে সেকেলে। বড়রাও গর্ব করে ছেলে তার ইংরেজীতে কথা বলে। হাজার বছরের বাঙালী ঐতিহ্য এখন অচল। ১৮ কোটি মানুষের আত্নপরিচয় বিলুপ্ত প্রায়। এই আধুনিকতার জন্য বাঙালী রক্ত বিসর্জন দেয়নি। একুশ এই শিক্ষা দেয়নি তাই, হতবাক হই। শ্যমল সবুজ বাংলা গেল কই? ৭১ এর মুক্তিযূদ্ধ আর শহীদদের আত্নত্যগ কি বিফলে গেল তবে? আসুন এই দিনে মুজিবের কন্ঠে চিৎকার করে বলি আমি মানূষ, আমি বাঙলী, বাংলা আমার দেশ, বাঙলা আমার ভাষা। শহীদের প্রতি অবনত চিত্তে সালাম জানাই। তোমাদের আত্নত্যগ বৃথা যাবেনা- জয় বাংলা।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরন্টো, কানাডা
২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১।