গত কয়েক দিন এদেশের মানুষের দায়িত্ববোধের ধরন দেখে আশাহত হওয়া ছাড়া আশান্বিত হওয়ার কোন কারন দেখছি না। আমরা কেউই করোনা মহামারীর পরিনতি দেখেও সংশোধন হচ্ছি না। সরকারের লকডাউন ঘোষণার মধ্যেও লক্ষাধিক মানুষের গন জমায়েত করতে একটুও চিন্তা করছিনা। আমরা আসলে কোন পথে হাঁটছি, আমরা কি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছিনা ! আমরা কি করোনা নিয়ে ইউরোপের পথে হাঁটছি না ! ইউরোপীয়ানরা খেলা পাগল জাতি, বিশেষত ফুটবল খেলা। বিশ্বের নামী-দামী ফুটবল ক্লাব গুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ইউরোপের। বড় বড় চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট গুলোও হয় ইউরোপে, যে গুলোতে ট্রিলিয়ন ডলার এর বাণিজ্য হয় প্রতিবছর। চোখের সামনে চায়নাতে এত বড় ম্যাসাকার হওয়ার পরও ট্রিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের লোভ সামলাতে পারেনি ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো। তারা টুর্নামেন্ট আয়োজন থেকে বিরত থাকেনি। সমগ্র ইউরোপে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পিছনে যে ফুটবল ম্যাচটিকে দায়ী করা হয় সে ম্যাচে পুরো ইউরোপের ৪০,০০০(চল্লিশ হাজার)দর্শক উপস্থিত ছিল। যারা ক্রমান্বয়ে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য সহ সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে দিয়েছে এই মহামারী। ইউরোপের সাথে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, কূঠনৈতিক সম্পর্ক এত গভীর যে ইউরোপের আক্রান্ত হওয়ার পর সমগ্র আমেরিকা আক্রান্ত হবে সেটাই স্বাভাবিক ছিল। হয়েছেও তাই। তার সাথে যোগ ছিলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতি আত্মবিশ্বাস ও আমেরিকার জনগণের খাম-খেয়ালি। তাদের নিজ গুনে (!) ইউরোপ ও আমেরিকা আজ মৃত্যুপুরী। আমরা চায়না দেখেছি, ইউরোপ-আমেরিকা দেখছি প্রতিদিন কিন্তু এখনো উপলব্ধি করতে পারছিনা কি ভয়াবহ করুন পরিনতি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
এটি স্পষ্ট, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠিন মনোবল ও অসীম সাহস নিয়ে এই করোনা যুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে সব দায়িত্ব তাঁর একার। আর কারো কোন দায়িত্ববোধ নেই। না হলে যে চিকিৎসাকর্মীরা করোনা রোগীদের সরাসরি সংস্পর্শে গিয়ে কাজ করছে তাদের জন্য N-95 মাস্ক এর জায়গায় ভুলবশত: (তাদের মতে) অন্য মাস্ক (অত্যন্ত নিন্ম মানের) যায় কিভাবে ! এখনো আমরা কারনে অকারনে লক্ষাধিক লোক জমায়েত হই কি করে! এই গন জমায়েত যে ইউরোপের সেই ফুটবল ম্যাচ এর মতো সারা বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে দেওয়ার কারন হবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে? এটিই যদি ছড়িয়ে পড়ার কারন হয়ে থাকে তা হলে তার দায় কি যারা জমায়েত করেছে তারা নিবে? জেনে রাখা ভাল আপনি আক্রান্ত হলে প্রথম সংক্রমণটা আপনার পরিবারের মধ্যেই হবে।
আমরা নিশ্চয় কেউ এদেশে ইতালী, স্পেন কিংবা ফ্রান্সের মত মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না, চাই না আমেরিকার মত আরেকটি মৃত্যুপুরী হোক। পরিস্থিতি এখনো বাংলাদেশের অনুকূলে। সুতারং সিদ্ধান্ত এখনি নিতে হবে। সরকারের যাবতীয় নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। প্রশাসনকে সহযোগীতা করতে হবে। নতুবা আখেরে ক্ষতিটা আমাদেরই হবে।
এম হাবিবুর রহমান
চীফ এঢিটর