Every construction has a destruction কথাটি আমার নয়, একটি দেয়ালে লেখা দেখেছি কয়েক বছর আগে। লেখাটি আমার ভাল লেগেছে। সত্যইত! পুরাতনকে ভেংগেইত বিবর্তন ঘটেছে বিশ্বময়। বাংলাদেশও উন্নত হয়েছে শুধু, হারিয়ে গেছে রূপটি বাংলার। সবুজ প্রান্তর, শস্য ক্ষেত,পাখীদের অবারিত কলোহল আর অসংখ্য গাছপালা হারিয়ে গেছে চেনা বাংলার সৌন্দার্য। শরিষার ক্ষেতে মৌমাছি, তাল গাছে বাবুই পাখীর বাসা বুনন, নিশ্চুপ দাড়িয়ে কানি বকের অপেক্ষা, রোদের উত্তাপে ডিম পারা মুরগীর ডাক, দাড় কাকের কর্কশ শব্দ আর, উঠানে ধান শুকাতে লাঠি হাতে বৃদ্ধার অনন্ত বসে থাকা। উননে নারীর ঘর্মাক্ত মুখখানি পরম সোহাগে নব বধুর সাজসজ্জা এসব এখন কবিতার ছন্দে। উদাস মাঝি আর ভাটিয়ালির সুর, জাম তলায় ক্লান্ত পথিকের অবিশ্রান্ত নিরবতা, আজান আর সংখ ধ্বনির মিলিত সন্ধাবেলা, লাংগল কাধে কৃষকের বাড়ী ফেরা। লন্ঠন জেলে কিষানীর চলা, গোয়ালে হাম্বা রব শান্ত গরুর বাধন- এখন সব অচেনা কেবল বিস্মৃত মনিকোঠায়।খেজুর রসের শীতের পিঠা, কলসি কাকে যুবতীর হেটে যাওয়া, পাল তোলা নৌকা নেই কোথায়ও। কাশ ফুলের পার ঘেষে গুন টেনে কুজু মাঝির টানা নেই, মাছরাংগার ঝাঁপ নেই, নৌপথে ইঞ্জিনের শব্দ দূষন। নৈসর্গিক নিরবতা, নদী জল বিষাক্ত এখন। সৌন্দার্যে শোশভিত বাংলা আর সজ্জিত শস্যক্ষেত বিলীন হয়েছে দৃশ্যটি। দেশটি কিষানের, কুমার আর কামার সকলের। মাঠে ঘাটে আর হাঁটেই চিনেছি বাংলাকে। মুজিবের বাংলার রূপটি বদলে গেছে। বনিক সেজে বিলিন করেছে বাংলাকে বিবর্তনের নেশায়। তাইত পাখীরা চলে গেছে, বাবুই পাখীর বাসা এখন জাদুঘরে। ভেসালের ছবি দেখে চিনাতে হয়, বাংলা এখন আধুনিক। ধংস হয়েছে পরিবেশ বাংলার এখন নিঃশ্বাসে বিষ হজম করি। খাল ভরাট হয়ে গেছে, নদী হয়েছে নর্দমা। বৃক্ষরাশি ছেটে দিয়ে দেশে অট্টালিকা চারিদিক, ধংস হয়ে গেছে বাংলার রূপ। মিঠা পানি ত্যজ্য করে দখলদারী এখন নদীতে। সংকুচিত নদীপথ অচল এখন নদীও। নদী খনন না করায় কমে গেছে ফসলী জমী। ভেজাল খাদ্যে ব্যাধি ছড়িয়ে রোগ বেড়েছে দেহে। দীর্ঘ লাইন হাসপাতালে, বানিজ্য বেড়েছে ডাক্তারের। আমরা এখন আধুনিক।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
২১ আগষ্ট ২০২০।