কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই পুলিশ সদস্যের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর মেট্রোপলিটনের তাজহাট ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে শুনানি শেষে বিচারক আসাদুজ্জামান তাদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাঁদের আদালত থেকে নিয়ে যায় পিবিআই।
রিমান্ডে নেওয়া দুই পুলিশ সদস্য হলেন—পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আমীর আলী ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান রোকন বিষয়টি নিশ্চিত করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই দুই পুলিশ সদস্যকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। শুনানি শেষে বিচারক তাদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। এ ঘটনায় নগরীর তাজহাট থানায় গত ১৯ আগস্ট মামলা হয়। এই মামলায় আসামি এএসআই মো. আমীর হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার রিকুইজিশনের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে ১৮ আগস্ট তাজহাট থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। গত ৩ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গঠিত অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, এএসআই আমীর আলী ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে বরখাস্ত করা হয়েছিল। পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তরের আগে তারা পুলি লাইনসে কড়া নজরদারিতে ছিলেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ছিলেন অন্যতম সমন্বয়ক। গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদ নিরস্ত্র ও একা থাকা সত্ত্বেও এবং দৃশ্যত পুলিশের জন্য কোনো হুমকি না হওয়া সত্ত্বেও শটগান দিয়ে নির্মম ও নৃশংসভাবে গুলি করা হয়। আবু সাঈদ পড়ে গিয়ে একাধিকবার দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে নৃশংসভাবে গুলি করে।
রংপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এস এম জাকির হোসেন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা কে ও তাদের আরও কী পরিকল্পনা ছিল এবং এতে আরও কারা জড়িত আছে, তা জানতে আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্য আসামিরা হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, রংপুর মহানগর উপপুলিশ কমিশনার আল মারুফ হোসেন, সহকারী কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান, আল ইমরান হোসেন, তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ রায়, এএসআই আমির আলী ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়।
এর মধ্যে আমির আলী ও সুজন চন্দ্র রায় সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। রংপুর রেঞ্জের সাবেক উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন ও রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম