জাতীয় ডেস্কঃ আজ রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নিজ কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পিরোজপুরের বেকুটিয়া পয়েন্টে কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাটির উর্বরতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে পারলে রাশিয়া-ইউক্রেনে মতো যুদ্ধ কিংবা যে কোনো পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যায়। আর তাই এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রেখে দেশের সব মানুষকে উৎপাদনমুখী হতে হবে।
এছাড়া করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি সামাল দিতে আবারও পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই এ (রাশিয়া-ইউক্রেন) ধরনের যুদ্ধ বাধুক আর যাই বাধুক, বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য আমাদের যে উর্বর মাটি আমরা সেটা ব্যবহার করে নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করব। কারও মুখাপেক্ষী হব না। ভিক্ষা চেয়ে চলব না। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। এইভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাদের চলতে হবে। সেটাই আমি আপরাদের আহ্বান জানাব। আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে যে, যেটা আমি আহ্বান করেছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আপনারা জানেন, একদিকে যেমন করোনা, এই মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা অনেক নাজুক হয়ে পড়েছে। অনেক উন্নত দেশ তাদের মূল্যস্ফীতি এত বেশি এবং সেখানে তাদের পণ্য পাওয়া কষ্টকর।’
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সেখানে তারা রেশনিং করে দিচ্ছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে। পানি ব্যবহার তারা সীমিত করে দিয়েছে। এমনকি যেন গোসলের পানি ও বেশি ব্যবহার না হয় সেই নির্দেশনা দিচ্ছে এটা ইউরোপে এবং ইংল্যান্ডে। এই অবস্থায় আমাদেরও আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে। তাই পানি বিদ্যুৎ ব্যবহারের সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বেধেছে, আমেরিকা রাশিয়ার ওপর স্যাংশন দিয়েছে। ফলে খাদ্য ক্রয়, সার প্রাপ্তি সবকিছুই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সবথেকে বড় কথা পরিবহন, আমরা বিদেশ থেকে যে জাহাজে করে পণ্য আনব, সেই জাহাজের ভাড়া অতিরিক্তি বেড়ে গেছে। কাজেই প্রত্যেকটা জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই সেই অবস্থায় আমাদেরকে আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা করতে হবে।’
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর গুরুত্ব তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই সেতুটি হবার পর পিরোজপুরবাসীর জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ আরও উন্মুক্ত হবে। আমরা এদিকে পদ্মা সেতুর করে দিয়েছি, পায়রার উপর অনেকগুলো সেতু করা হয়েছে, কীর্তনখোলা নদীতে সেতু করা হয়েছে। এই সেতুটি হবার পর পিরোজপুর এর সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যাবে। সবথেকে বড় কথা পিরোজপুরের পেয়ারা আমরা খুব তাড়াতাড়ি তাজা তাজা ঢাকায় বসে খেতে পারব। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। পিরোজপুরে প্রচুর পেয়ারা হয়। সেগুলোকে ওখানে আপনারা প্রসেস করতে পারেন, ইন্ডাস্ট্রি করতে পারেন, প্রিজার্ভ করার ব্যবস্থা করতে পারেন, শিল্পায়ন গড়তে পারেন ওই অঞ্চলে-সেই সুযোগটাও সৃষ্টি হবে। পদ্মা সেতু হওয়াতে যেমন তাজা ইলিশ চলে আসছে, তেমনি আপনাদের এদিক থেকে শাকসবজি ফলমূল বিশেষ করে পেয়ারা খুব দ্রুত চলে আসবে। আমাদের ওই অঞ্চলের মানুষ তারা চিরদিনই অবহেলিত। হয়তো একটা ফসল হয়, কোনোরকম কষ্ট করে দিনযাপন করতে হয়। আমরা কিন্তু বসে থাকিনি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে দিয়েছি, সেখানে একটা ক্যান্টনমেন্টও নির্মাণ করে দিয়েছি, সেখানে নৌঘাঁটি করা হচ্ছে। এখন আপনাদের উৎপাদনমুখী হতে হবে। একইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে।’
একনজরে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুঃ পিরোজপুর ও বরিশালকে সংযোগকারী এই সেতুটির মূল দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০০ মিটার। সেতুর দুই প্রান্তে ৪৯৫ মিটার ভায়াডাক্ট বাদ দিলে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় ১ কিলোমিটার। সেতুটি ১০টি পিলার এবং ৯টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের এই সেতুর পিরোজপুর ও বরিশাল প্রান্তে এক হাজার ৪৬৭ মিটার সংযোগ সড়কসহ পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে আরও দুটি ছোট সেতু ও বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে চীন সরকার। বাকি ২৪৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে।