নানা জটিলতার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শুরু হচ্ছে হাতিরঝিলের ক্যান্সারখ্যাত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ। বুধবার (২২ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজের উদ্বোধন করবেন গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে শুরু হবে বলে জানিয়েছে ভবন ভাঙার চূড়ান্ত কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ।
২ লাখ ৬৬ হাজার বর্গ মিটারের এ ভবনে কার্যক্রম শুরু করে ৩টি বেসরকারি ব্যাংকসহ ছোট বড় প্রায় অর্ধশত ৩৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। পোশাক শিল্পের বন্ড ইস্যুসহ সরকারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালিত হতো এ ভবন থেকেই। ভবনে ছিল বড় আকারের মিলনায়তন, বিলাসবহুল অ্যাপারেল ক্লাব, সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগারসহ নানা সুযোগ-সুবিধা।
তবে পথচলার কয়েক বছরের মাথায় বির্তকের জন্ম দেয় এ ভবন। এ ভবনকে অবৈধ উল্লেখ করে ২০১০ সালে খবর প্রকাশ একটি জাতীয় দৈনিক। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আসে। খালের জমি দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে উল্লেখ করে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে এ ভবন ভাঙার আদেশ দেন উচ্চ আদালত। রায়ে ভবনটিকে হাতিরঝিলের ক্যান্সার আখ্যা দেয়া হয়।
এরপর শুরু হয় আইনি জটিলতা। কেটে যায় দীর্ঘ সময়। অবশেষ ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর উচ্চ আদালতের দেয়া রায় বহাল রেখে ভবন ভাঙার জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ। এরপর ভবন ছাড়তে সময় আবেদন করলে প্রথমে ৬ মাস ও পরে ৭ মাস সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত। এ সময়ের মধ্যেও ভবন সরাতে না পারায় ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল মুচলেকা দিয়ে আরও এক বছর সময় চায় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঞ্জুর করা সময়সীমা শেষ হয়ে গেল বছরের ১২ এপ্রিল। রায় মেনে ভবন ছেড়ে দেয় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ১৬ এপ্রিল ভবনটি নিজেদের দায়িত্বে নিয়ে সিলগালা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক।
এরপর ভবনের মালামাল বের করে নিতে কয়েক দফা সুযোগ দেয় রাজউক। ওই মাসেই ভবন ভাঙার দরপত্র আহ্বান করে সংস্থাটি। দরপত্রে ভবনের মালামল ১৬ ভাগ করে বিক্রি বাবদ অর্থের পরিমাণ ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা প্রাক্কলন করা হয়। এর মধ্যে ভবন ভাঙা ও অপসারণ বাবদ ব্যয় ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ধরে ভবনটির নিলাম মূল্য ধার্য করা হয় ২ কোটি ৪৫ লাক ৩০ হাজার টাকা। দরপত্রে অংশ নেয় ৫টি প্রতিষ্ঠান। তবে শেষ মুহূর্তে ১৭ লাখ টাকা জামানত বাজেয়াপ্ত ভবন ভাঙার কাজ থেকে সরে আসে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। ফলে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায় ভবন ভাঙার চুড়ান্ত কার্যাদেশ পায় ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ।