”আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স এন্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক লিঃ এর অন্তবর্তীকালীন ভুয়া কমিটি গঠন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও প্রতিমন্ত্রী ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন-অনুমোদনহীন কমিটির ভিত্তি নেই। ”
মহামান্য হাইকোর্টে কমিটি সংক্রান্ত মামলা চলাকালে এবং সমবায় অধিদপ্তরের অনুমোদনহীন অন্তবর্তীকালীন কমিটি কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স এন্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক লিঃ থেকে বহিস্কৃতসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। অধিদপ্তর বলছে- তাদের অনুমোদনহীন কমিটির কোন মূল্য নেই। সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেছেন- এই ধরনের কমিটির কোনো ভিত্তি নেই। কমিটি করার ক্ষমতা এবং তা অনুমোদনের ক্ষমতা একমাত্র অধিদপ্তরের আছে। আর প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কমিটির সদস্যরা বলছেন- ভুয়া কমিটির কোন প্রতারণার দায় তারা গ্রহণ করবেন না।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে-২০১৮ সালের শেষ সময় থেকে আজিজ কো-অপারেটিভে নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট আজিজ কো-অপারেটিভের কমিটি সংক্রান্ত রিটে পক্ষভুক্ত হয়ে বহিষ্কৃত ম্যানেজারসহ কয়েকজন এই কমিটি স্থগিতাদেশ চান। তাদের ওই রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত হাইকোর্ট বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমান কমিটি সংক্রান্ত মামলাটি দ্রুত শেষ করতে বলেন। মামলাটি এখন হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ। হাইকোর্টে মামলা পেন্ডিং ঢাকায় আজিজ কো-অপারেটিভ চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি আইনগত নোটিশ দিলে অধিদপ্তর তা গ্রহণ করে। নোটিশে ওই অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির বৈধতা এবং মামলা শেষ না পর্যন্ত আজিজ কো-অপারেটিভ কে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ বা বাধা সৃষ্টি না করার জন্য বলা হয়েছিল। এরপর আজিজ কো-অপারেটিভের চলমান কমিটি এখনো প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া আগের কমিটির চেয়ারম্যান এম তাজুল ইসলাম একাধিক মামলায় এখন কারাগারে।
জানা গেছে, এরই মাঝে গত শনিবার আজিজ কো-অপারেটিভ থেকে দুর্নীতির দায়ে বহিস্কৃত ও সমবায় অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিক সদস্যপদ হারানো সাবেক সেক্রেটারি এসএম হারুন-অর-রশিদ ও বহিস্কৃত কপিল মুনির ম্যানেজার আসাদুর রহমান পিয়ারুলসহ কয়েকজন মিলে রাজধানীর ভাটারায় কিছু গ্রাহককে ম্যানেজার দেখিয়ে একটি ভুয়া অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। এই কমিটির সভাপতি দেখানো হয়েছে আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত উপ-কমিটির নেতা প্রেম কুমার মন্ডল কে। অনেকে এই কমিটির বিষয়ে না জানলেও তার নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
আজিজ কো অপারেটিভ এর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সেক্রেটারি হারুন-অর-রশিদ মজুমদার গতকাল রোববার অধিদপ্তরে একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে তিনি লিখেছেন একদিকে হাইকোর্টে মামলা চলমান অন্যদিকে অধিদপ্তরের অনুমোদনবিহীন স্বঘোষিত এই কমিটির কোন প্রতারণা করলে তার দায় আজিজ কো- অপারেটিভ গ্রহণ করবে না। একইসঙ্গে এই কমিটি সম্পর্কে তিনি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা-পরিচালক আহসান কবির বলেছেন-আজিজ কো অপারেটিভে কমিটি নিয়ে মামলা থাকায় আজও পর্যন্ত তাদের অন্তবর্তীকালীন কমিটির দায়িত্ব বুঝে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আর মহাপরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেছেন-এই কমিটির বিষয়ে আমার জানা নেই। অধিদপ্তরের অনুমোদন বিহীন এই কমিটির কোনো ভিত্তি নেই। অনুমোদনহীন কমিটির পরিচয় দেওয়া মানেই হচ্ছে প্রতারণা।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেছেন-আজিজ কো অপারেটিভের চলমান কমিটি ব্যর্থ হলে অধিদপ্তর কমিটি গঠন করে চালাবে। অধিদপ্তরের বাইরের কেউ অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি করতে পারে না। যদি কেউ করে থাকে তা সম্পূর্ণ ভূয়া। অধিদপ্তরের অনুমোদনবিহীন কমিটির কোন ভিত্তি নেই। তিনি দাবি করেছেন আজিজ কো- অপারেটিভের ভিত্তিহীন কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির চেয়ারম্যান দাবিদার প্রেম কুমার মন্ডল তাদের ঘোষিত কমিটির অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেই জানিয়ে বলেন- তার এলাকার কিছু মানুষ অনেক দিন থেকে টাকা পাচ্ছে না। তাই তিনি এলাকার মানুষের টাকা আদায় আদায়ের চেষ্টা করছেন। অধিদপ্তরের অনুমোদনহীন কমিটি করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিষয় তিনি বলেছেন-কিছু লোক হয়তো আবেগে কাজটা করে ফেলেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সেক্রেটারি দাবিদার এসএম হারুন অর রশিদ বলেছেন-তিনি আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য কাজ করছেন। অধিদপ্তর এর উপর নির্ভর করছে তাদের কমিটির অনুমোদন দেবে কিনা। বহিস্কৃত ও সদস্য পদ হারানোর বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি তার।
আর বর্তমান কমিটির সেক্রেটারি হারুন-অর-রশিদ মজুমদার বলেন, এসএম হারুন দুর্নীতির দায়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কৃত। ভুয়া কমিটি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করছেন তিনি। এসএম হারুন এবং প্রেম কুমার মন্ডলের অনুমোদনহীন এই কমিটির বিষয়ে আমি অধিদপ্তরকে চিঠি লিখেছি। একই সঙ্গে সারাদেশের কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা কেন্দ্র করে এসএম হারুন বিভিন্ন জায়গায় ভুল মেসেজ দিচ্ছেন। হারুন আদালতের যে নির্দেশনা বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করছেন সেই একই নির্দেশনায় মূল মামলা দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে। এই কথাটা তিনি কোথায়ও বলেন না। এর আগেও তিনি নানান ধরনের কমিটি করে অধিদপ্তরে জমা দিয়ে সাধারণ গ্রাহক ও আজিজের কর্মীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।