তীব্র মাথা যন্ত্রণা সঙ্গে গা গোলানো কিংবা মাথার এক পাশ থেকে শুরু হয়ে গোটা মাথায় ছড়িয়ে পড়া অসম্ভব ব্যথা, সঙ্গে হালকা জ্বর। এই উপসর্গগুলো মাইগ্রেনের রোগীদের কাছে নতুন নয়। একটানা বেশ ক’দিন থাকার কারণে এই ব্যথা শরীরকে কাবু করে দেয়। শীতে এমনিতেই ঠান্ডা লেগে সাধারণ সর্দি-কাশি, মাথা যন্ত্রণার সম্ভাবনা বাড়ে। এর সঙ্গে যদি যোগ হয় মাইগ্রেনের কষ্টও, তা হলে তা এক প্রকার অসহনীয় হয়ে ওঠে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘‘কেবল ওষুধ বা প্রয়োজনীয় সাবধানতা না নিলেই যে মাইগ্রেনের হানা বাড়ে, এমনটা নয়। বরং আমাদের নিত্য অনেক অভ্যাসের উপরেও নির্ভর করে এ ব্যথার প্রকোপ বাড়বে কি না। প্রতি দিনের বেশ কিছু অভ্যাস ত্যাগ করলে কিন্তু অনেকটা দূরে রাখা যায় এই যন্ত্রণাদায়ক অসুখকে।’’ নিজের কোনও ভুলেই মাইগ্রেনকে ডেকে আনছেন না তো? চিকিৎসকদের মতে কোন কোন অভ্যাসের জেরে এই অসুখের সম্ভাবনা বেড়ে যায় রইল তার হদিশ। মানসিক চাপ: কর্মব্যস্ত জীবনে একটানা অনেক ক্ষণ কাজ করা, নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া না করা, সারা ক্ষণ ডেডলাইনের চাপ এগুলি ভয়ংকর প্রভাব ফেলে মনে। এই মানসিক চাপ বাড়তে থাকলে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়া খুব স্বাভাবিক। অনিয়মিত ঘুম: রোজ কত ক্ষণ ঘুমোন? চেষ্টা করুন ঘুমের জন্যঅন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বরাদ্দ রাখতে। একান্ত না পারলে অন্তত ৬ ঘণ্টা ঘুমোন। তবে ঘুমের মাত্রা একই রাখুন। এক দিন কম ঘুমোলেন, কোনও এক দিন বেশি ঘুমোলেন এমন না করে ঘুমের মাত্রা সমান রাখার চেষ্টা করুন। চিনি: অতিরিক্ত চিনি বা অ্যাডেড সুগার দেওয়া আছে, এমন খাবার এড়িয়ে চলুন। রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়লে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। মিষ্টি জাতীয় কিছু খান, তবে পরিমিতি বোধ রেখে। আবহাওয়া: খুব রোদ বা খুব বৃষ্টি— দুটোই মাইগ্রেনের জন্য খারাপ। খুব গরম বা খুব আর্দ্র পরিবেশে খুব একটা ঘোরাঘুরি করবেন না। একান্ত করতে হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু বিশেষ ওষুধ বা ব্যায়ামের শরণ নিন, যার প্রভাবে মাইগ্রেন দূরে থাকবে। না খাওয়া: দীর্ঘ ক্ষণ না খেয়ে থাকলে গ্যাস্ট্রিকের প্রকোপ শুরু হয়। মাইগ্রেন টেনে আনতেগ্যাস্ট্রিকের জুড়ি নেই। কাজেই গ্যাস্ট্রিক এড়াতে পেট খালি না রাখাই উচিত। গ্যাস্ট্রিকের আক্রমণ ঠেকাতে পারলে মাইগ্রেনের ভয়ও কমবে। কফির অভ্যাস: কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা হলে তা হঠাৎ করে বন্ধ করবেন না। হু-এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মাইগ্রেনের রোগীদের ক্যাফিনের উপস্থিতি হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ে। তাই কফি ছাড়তে হলে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। প্রয়োজনে ডায়াটিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলুন। শব্দদূষণ: অতিরিক্ত আওয়াজ, একনাগাড়ে জোরে আওয়াজ, গাড়ির একটানা হর্ন এ সব থেকে দূরে থাকুন। এতে স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে ও তা মাইগ্রেনের সমস্যাকে ডেকে আনে। শব্দের প্রকোপ থেকে কান বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। সূত্র : আনন্দবাজার