গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ভারতের পণ্য রফতানি ২৮ শতাংশ কমে গেছে। ঐ মাসে বাংলাদেশে ৬৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে ভারত। গত ২০২৩ সালের আগস্টে এর পরিমাণ ছিল ৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকাশিত পরিসংখ্যানের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
বাণিজ্যিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভারত থেকে বাংলাদেশে বেশি রফতানি হয় তুলা। গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ভারতের তুলা রফতানি প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। ঐ মাসে রফতানির পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি ডলার, যা তার আগের বছরের আগস্টে ছিল ১১১ কোটি ডলার। এছাড়া সাম্প্রতিক বিক্ষোভের পর বাংলাদেশে পোশাকের ক্রয়াদেশ কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের বস্ত্রশিল্পেও। বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং অন্যান্য পণ্য রফতানি করে থাকে ভারত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, কিছু বিদেশি ক্রেতা পোশাক কেনার বিষয়ে ভারতে বস্ত্র কারখানাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ভারতীয় সুতা রফতানিতে পতনের ধারা শুরু হয়েছে।
রেটিং সংস্থা ক্রিসিল অবশ্য বলছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ভারতের বাণিজ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু দেশটিতে যদি অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে সেটি ভারতের কিছু রফতানিমুখী শিল্পের জন্য আয় ও চলতি মূলধন ঘাটতির কারণ হতে পারে। বাংলাদেশ এসব শিল্পের জন্য চাহিদা অথবা উৎপাদনের কেন্দ্র। শিল্প অথবা খাত রফতানি আয়ের ওপর কতটা নির্ভরশীল, প্রভাবের মাত্রা তার ওপর নির্ভর করবে। ভারতের করপোরেট জগতের ঋণমানের ওপর নিকট মেয়াদে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আমরা মনে করি না। এই বিষয় এবং বাংলাদেশি টাকার মান কী দাঁড়ায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ক্রিসিলের মতে, বাংলাদেশের ঘটনাবলি ভারতের তুলাজাত সুতা, বিদ্যুৎ, জুতা, সফট লাগেজ এবং দ্রুত বিক্রয় হয়, এমন পণ্যের ওপর ‘ছোট কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য’ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ভারতীয় জাহাজভাঙা শিল্প, পাট এবং তৈরি পোশাকশিল্প এর কারণে উপকৃত হতে পারে।
এছাড়া সংস্থাটি দাবি করেছে, বাংলাদেশে রফতানি কমে যাওয়ায় ভারতের বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ দেশটির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য খুব বেশি নয়। গত অর্থবছরে ভারতের মোট রফতানির ২ দশমিক ৫ শতাংশ গেছে বাংলাদেশে, আর আমদানির ক্ষেত্রে এর হার মাত্র ০.৩ শতাংশ।
বাংলাদেশে ভারতের রফতানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল তুলা ও তুলাজাত সুতা, পেট্রোলিয়াম পণ্য, বিদ্যুৎ ইত্যাদি। অন্যদিকে, আমদানির তালিকায় ছিল ভোজ্যতেল, সামুদ্রিক পণ্য ও পোশাক।
ক্রিসিলের তথ্যমতে, ভারতের তুলা রফতানির আট থেকে ১০ শতাংশ যায় বাংলাদেশে। তাই এই শিল্পের প্রধান রফতানিকারকদের রাজস্ব আয় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে অন্যান্য দেশে তুলা রফতানি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তাদের সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া, ভারতের জুতা, দ্রুত বিক্রয় হওয়া পণ্য এবং সফট লাগেজ খাতের ওপরও কিছু প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, এ ধরনের অনেক কোম্পানির কারখানা বাংলাদেশে অবস্থিত।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য প্রকল্পে নিয়োজিত প্রকৌশল, পণ্য কেনাকাটা ও নির্মাণ খাতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর কাজেও বিলম্ব হতে পারে। এর কারণ হিসেবে ক্রিসিল বলছে, এসব কোম্পানির কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মাসখানেক আগে ভারতে ফিরে গেছেন।
আজ ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১২:০০ | বুধবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি