গ্রীক দেবী আফ্রোদিতি ভালবাসার দেবী হয়ে উঠার কাহিনী কি আমরা জানি? শুধু এতটুকু জানি ভালোবাসার দেবী ভিনাস, যার পিছনে লুকিয়ে আছে ‘হেলেন অব ট্রয়’ এর সম্পূর্ণ কাহিনীর উৎপাটন। যাই হোক আমরা সবাই কম বেশি হেলেন অব ট্রয় দেখেছি। সেখানে হেক্টরের বীরত্বের কথা সবাই জানি, আর একিলিক্স এর রাগ এর পরিনামও সবাই দেখেছি। ঠিক এমনই এক মহাকাব্য “হ্যাভি সুইটনেস” থেকে নেয়া “অ্যাশেস অব লাভ”এর কাহিনী সম্পর্কে কিছু বলব, প্রথমেই বলে নিই এটি একটি চাইনিজ মিথোলজি, কাহিনী কালনিক দেব-দেবী আর যাদুর উপজীব্য বিষয়।“ অ্যাশেস অব লাভ” এই চাইনিজ সিরিয়ালটি মুক্তি পায় ২০১৮ সালে, ২০১৯ সালে এই সিরিয়ালটি সমস্ত ক্যাটাগরীতে পুরষ্কার প্রাপ্ত হয় এবং NETFLIX-এ ১.৫ বিলিয়ন ভিউস নিয়ে এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটকের তালিকায় এটি স্থান করে নিয়েছে। কি আছে এই নাটকের মাঝে? সত্য বলতে কি এটা কোন মুভির চেয়ে কোন অংশে কম নেই। আর দেখার পর আপনি আর একবার দেখতে চাইবেন। রুপকথার সেই কাল্পনিক পাখির কথা ‘ফিনিক্স’ এর নাম আমরা সবাই জানি, আগুনের ছাই থেকে সেটা আবার জন্ম নেয়। ফিনিক্স যে হচ্ছে ফায়ার ইমমরটাল এবং যুদ্ধের দেবতা প্রেমে পড়ে একটা ছোট্ট পরী যে থাকত একটা বন্দী জীবনে যার জানা ছিল না বাইরের পৃথিবীর সম্পর্কে। ফুলের রাজ্যের সমস্ত পরীর মাঝে সে হচ্ছে খুবই ম্লান, সাধারণ আর সাধাসিধা, সব সময় ছেলে সেজে অল্পস্বল্প জামা পরিধান করে ছোট ছোট জাদু নিয়ে যে ছিল অনেক উচ্চাভিলাসি আর বোকা প্রকৃতির ।স্বর্গের রাজ্যের রাণী যখন তার মা কে মেরে ফেলে তখন তার মা এই মেয়েটিকে জন্ম দিতে মেয়ে তার ভবিষ্যৎ দেখে শিহরিত হয় তার মেয়েকে ভালোবাসার জন্য অনেকগুলো পরীক্ষা দিতে হবে আর জীবন হবে বেদনাময় কষ্টের তাই তার কষ্ট যাতে না পেতে হয় জন্মের পরপরই একটা পিল খাইয়ে দেয়া হয় যেন মেয়েটির হৃদয়কে আয়ত্বে রাখতে সক্ষম হয়। মেয়েটির নাম রাখা হয় জিন মি, তার ভিতর সম্পূর্ণ ভালোবাসার অনুভতি শুন্য রাখা হয়। সে অনুভূতিহীন ভালোবাসার প্রতি, ভালোবাসার মানুষের প্রতি। হঠাৎ একদিন একটা আগুনের গোলক তার উঠানে এসে পড়ে, সে ভাবে এটা কি হতে পারে, আবিষ্কার করে একটা পাখি অর্ধমৃত অবস্থায় পাখিটিকে সে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করে, কিন্তু এই পাখিটির যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে পরিপূর্ণ মানুষ। ফিনিক্স যে আবার জেগে উঠে, সে হচ্ছে স্বর্গের দেবতার ছেলে ফায়ার ইমমরটাল এবংযুদ্ধের দেবতা ।ফিনিক্সকে জিন মি অনুরোধ করে তাকে এখান থেকে বাইরে নিয়ে যেতে কারণ সে তার জীবন বাঁচিয়েছে, যেই কথা সেই কাজ, বোকা মেয়ের আবদার রাখার জন্য ফিনিক্স তাকে উঠিয়ে নিয়ে স্বর্গে চলে আসে স্বর্গে জিন মি তার ছাত্রী হিসেবে তার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে থাকে যাদুবিদ্যা ইতি মধ্যে সে এখানকার সমস্ত দেব-দেবতার সাথে পরিচিত হতে থাকে আর রোমঞ্চকার সময় পার করে। ফিনিক্স এর বড় ভাই নাইট ইম্মরটাল তার প্রথম পরিচয়ে সে তার সত্যিকার পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। রাতের দেবতা সে বাস্তবিক একজন ড্রাগন নাইট ইমমরটাল সে কিনা প্রথম দেখাতেই জিন মি প্রতি তার অনুভতি আবিষ্কার করে, যদিও জিন মি তাকে শুধুমাত্র বন্ধু হিসেবেই দেখে।
এভাবেই কাহিনী এগোতে থাকে যুদ্ধ, ষড়যন্ত্র, পারিবারিক দম্ভ, শত্রূতা, কলহ, মোহ, লোভ, ক্ষমতার প্রতি অহংকার, সিংহাসন নিয়ে নাইট ইমমরটালের কর্তৃক, তার পুরাতন ভয়ংকর শৈশব সবকিছুর সংমিশ্রণে এক অদ্বিতীয় মহাকাব্য। ভালোবাসা কি আসলেই সহজ? ভালোবাসা কি মধুর? নাকি ভালোবাসা আসলে শুধুমাত্র বেদনাময় আর উৎসর্গ করা। জিন মি সে সমস্ত মন প্রাণ দিয়ে ফিনিক্স কে ভালোবাসে তা হলে সে কি জন্যে পিছন থেকে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে? এই দৃশ্য যে শত মানুষক অশ্রুসিক্ত করবে শুধু তাই না, এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে নায়িকার প্রতি ক্ষোভ জন্মাবে অনেকের মনে যখন সে বুঝতে পারবে ফিনিক্স যে কিনা নির্দোষ। অবশেষে সে তার জীবন দিয়ে তাকে ফিরাতে ভয়ানক স্মেক মাউনটেইনে অভিযান করবে। রেসারেসকসন পিল খাওয়াতে গিয়ে নিজের অর্ধেক আয়ু সে ত্যাগ করবে। কিন্তু যখন ফিনিক্স এর পুনর্জন্ম হবে তখন কি তাকে আগের মত বিশ্বাস করতে পারবে? নাকি আগের মতো ভালোবাসতে পারবে? নাকি তার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জিন মি কে সে হত্যা করবে? কিন্তু জিন মি কে সে তার প্রাণের চেয়েও ভালোবাসে যার জন্য সে সিংহাসন ত্যাগ করে, যার জন্য সে তার মায়ের বিরুদ্ধে যায়, যার জন্য সে পৃথিবীতে নিজে বিষপান করে। তাকে ভোলা কি এত সহজ হবে তার জন্য ?“অ্যাসে অব লাভ” শেষটা কেমন হবে? দুঃখের না সুখের? ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের ভালোবাসা থাকবে। অটুট আর প্রেম থাকবে। সব সময়ই কষ্টের আর বেদনাময় তারপরও তাদের দুজনের ভালোবাসা থাকবে গভীর রোমান্টিক আর অসীম।
শারমীন সুলতানা রীতি (ব্লগার)