মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গলে অবৈধ বালু ব্যবসার প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসী হামলায় ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছে। মঙ্গলবার (২রা মে) ভুনবীর চৌমহুনীতে এজাহারভুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার এর দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন যুবকের উপর বর্বরোচিত হামলায় ডান হাতের কনুই কেটে ফেলায় গুরুত্বর গুরুত্বর অবস্থায় তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় চিহ্নিত বালু ব্যবসায়ী জলিল মাহমুদকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৭-৮ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং জিআর ১৩৩/২৩।
গত শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের স্থানীয় চৌমহুনাস্থ আলকাছ স্টোরের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে এ ঘটনা ঘটে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন আসামীগণ পুর্বপরিকল্পিত ভাবে দা’ লাঠি , চাপাতি, রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ৫টি মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে এসে হামলা চালায়। এসময় প্রধান আসামী জলিল মাহমুদের নির্দেশে আসামীরা আলিশারকুল গ্রামের মৃত ওয়াহাব উল্ল্যার ছেলে আলকাস মিয়া ও তার ছেলে বুলবুল আহমেদকে দোকান হতে টেনে রাস্তায় নিয়ে হত্যার উদ্যেশ্যে চা পাতি দিয়ে কয়েক দফা আঘাত করে। এতে আলকাস মিয়ার ডান হাত ও পেটের ডান পাশে মারাত্বক কাটা জখম হয়। এসময় আলকাস মিয়ার ডান হাতের কব্জির হাড় কেটে ঝুলে পড়ে। সাহেদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা তাকেও দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে আহত সাহেদ মিয়ার বা হতে ১৭টি সেলাই দেয়া হয়।
এছাড়া কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুত্বর আহত আলকাস মিয়া ও তার ছেলে বুলবুল আহমদকে দ্রুত মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করে। অবস্থার অবনতি দেখে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল থেকে তাদের সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
সেখানে আলকাস মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতাল পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আসামীদের সাথে পূর্ব বিবাদের জের এবং অবৈধ বালু ব্যবসার প্রতিবাদ করায় এই হামলার ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত আলকাছ মিয়ার অপর ছেলে ফেরদৌস আহমেদ বাদী হয়ে আলিশারকুল গ্রামের মৃত আমজদ উল্ল্যার ছেলে জলিল মাহমুদ (৫০) কে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে রোববার শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অপর আসামীরা হলেন, জলিল মাহমুদের ভাই জালাল মিয়া (৫২), একই গ্রামের মৃত জয়নাল মিয়ার পুত্র জাহিদুল ইসলাম ওরফে রনী (২৫) ও জাহাঙ্গির মিয়া (৩২), মৃত ছোবহান মিয়ার পুত্র রিপন মিয়া (৩৫) ও আলআমিন (৩০), মৃত ফিরোজ মিয়ার পুত্র আহাদ এবং মৃত রহমান মিয়ার পুত্র রাসেল মিয়া (৪০)। এনিয়ে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এছাড়া আইন-শৃংখলা পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে রেব সদস্যদের ওই এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানিয়েছেন, আসামীদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকার চিহ্নিত অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সরকার নিষিদ্ধ সিলিকন বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে আসছিল। গ্রামের কৃষি জমির মাটি কেটে গর্ত করে বালু উত্তোলন করে এলাকার পরিবেশ, সরকারি, রাস্তাঘাট ও গ্রামীন অবকাঠামো মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ করছেন। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করার দায়িত্ব নিয়ে রেখেছে এই অবৈধ বালু খেকোরা।
এনিয়ে এলাকার লোকজনদের সাথে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মানুষ প্রতিবাদ করে কুলিয়ে উঠতে পারতো না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই অবৈধ বালু ব্যবসার প্রতিবাদ করার জের ধরে এই হামলার ঘটনা তবে এজাহার সূত্রে জানা গেছে বিগত দিনে ইউপি নির্বাচনের জেরে এই নির্মম হামলার শিকার হয়েছে ভোক্তভোগীরা।
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি