অবহেলিত জরাজীর্ণ সমশেরনগরের দুর্দশাগ্রস্ত মৌলভীবাজারের সমশেরনগর রেলস্টেশন। নির্মাণের শতবর্ষ অতিক্রমের পরও উন্নয়নের এতটুকুন ছোঁয়া লাগেনি এ রেলস্টেশনের আদলে। বিভিন্ন সূত্রের বরাত থেকে জানা যায়, শমসেরনগর রেলস্টেশনটি প্রায় ১২৬ বছরের পুরানো একটি রেলস্টেশন।
ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখা যায় যে সোয়াশতবর্ষী স্টেশনটির চেয়ে কয়েক শতবর্ষী পুরানো হলো হাটি হাটি পা পা করে গড়ে উঠা শমসেরনগর জনপদটি। সতেরো শতকে শ্রীহট্টের ফৌজদার সমশের খাঁ বাহাদুরের নামে এই জনপদটির নাম রাখা হয়েছিল সমশের নগর। সেই থেকে বহুচড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজ এ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। এর যতটুকু উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা বলতে গেলে সবকিছুই হয়েছে স্থানীয় জনসাধারণের দীর্ঘকালের জীবনযাত্রার তাগিদে সংগঠিত লেন-দেনের স্বতঃস্ফূর্ততায়। সে সময় শমসেরনগর একটি পরগনা ছিল। প্রায় ৫শত বছরের পুরানো এ জনপদটিও শতবর্ষী রেলস্টেশনের মত উন্নয়নের এতটুকুন আছড়ের ছোঁয়া পায়নি। অথচ এখানে রয়েছে বাংলাদেশের হাতেগোনা কয়েকটি বিমানঘাঁটির বৃহৎ একটি ঘাঁটি। এই জনপদের তিনদিক ঘিরে রয়েছে বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বাজারজাত পণ্য চা-এর একাধিক কারখানা যা স্থানীয় কথায় চা-বাগান বলেই ডাকা হয়। সম্প্রতি নতুন করে এই জনপদের কাছেই খোলা হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মালপরিবহন কেন্দ্র ‘চাতলাপুর বাণিজ্যিক সীমান্ত বিনিময় কেন্দ্র’। ফলে জনপদটির গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না। ইংরেজ আমলে নির্মিত টিনের ঘরটি কোনমতে টিকে আছে। যেকোন ঝড়ে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
জানা যায়, ১৮৯৬সালে যখন কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ নির্মাণ করা হয় তখনই এই শমসেরনগর রেলষ্টেশন স্থাপন করা হয়। সুদীর্ঘ এ সময়ে উল্লেখ করার মত উন্নয়নের কোন স্পর্শ পায়নি এ ষ্টেশনটিও। দীর্ঘ এ সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে এখানে একটি টিনের ঢাকনা আছে যার পেছনে রয়েছে ষ্টেশনের একটি ছোট্ট দফতর যার পাশেই রয়েছে একখানা অতীব দূর্গন্ধযুক্ত শৌচাগার। সুদীর্ঘ সময়ের অব্যবস্থা অবহেলার কারণে ষ্টেশনের সংস্কার বলতে কিছুই হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ রেলকোম্পানীর আয় কোনভাবেই কমেনি। কোম্পানী লাখ লাখ টাকা আয় করছেন এ ষ্টেশন থেকে। অথচ ষ্টেশনে যাত্রীদের জন্য নেই কোন উপযুক্ত বিশ্রামকক্ষ বা বসার ছাউনি। অনেক সমস্যায় জর্জড়িত ষ্টেশনটি বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু নতুন করে নির্মাণ কিংবা সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়ার কোন লক্ষনই দেখা যাচ্ছে না। ষ্টেশনে রেল থামার ছাউনির টিনের চাল দিয়ে বৃষ্টির দিনে পানি পড়ে। রেল ষ্টেশনসহ এর চতুর্দিক ময়লা আবর্জনায় ভরপুর হয়ে স্তুপ আঁকারে পলে পলে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সারাশহরময়। একটি অতীব নিম্নমানের পরিবেশ দূষণকারী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করে আছে স্টেশনের চতুর্পার্শ্বে।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে জানা যায়, স্টেশনের বহু জমি জবরদখলে চলে গেছে সে অনেক আগ থেকেই। সুযোগ সন্ধানী জবরদখলকারীরা অবস্থা বুঝে কোপ মেরে দখল করে নেয় জমি। আর এমন অবস্থা চলে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এতো পুরনো ষ্টেশন অথচ আজ অবদি যাত্রী ছাউনী বড় করা হয়নি, নির্মাণ হয়নি কোন মানসম্মত যাত্রী ছাউনী কিংবা ভবন। দেশের ৫টি আন্তঃনগর রেলগাড়ী এখানে এ ষ্টেশনে যাত্রী উঠায়-নামায়। ফলে, রেলগাড়ী এসে থামলে যাত্রী সাধারণকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সবচেয়ে হাস্যকর যে বিষয়টি তা’হলো এ স্টেশনে মাত্র ৮ থেকে ১০জন যাত্রী টিকেট ক্রয় করতে পারেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এদিকে জনপদটির জনসংখ্যা স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরে দশগুণ বেড়েছে। মানুষের যাতায়াত যোগাযোগ আগের তুলনায় হাজারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ও মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে ছোট্ট এই গ্রামীণ শহরে আসা-যাওয়া করে।
সমশেরনগরের প্রবীন ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট লেখক সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিক শহীদ সাগ্নিক বলেন, বিলম্ব না করে সমশেরনগর রেলস্টেশনের আধুনিকায়ন এখন শুধু মাত্র যোগপযোগী উন্নয়নের দ্বারা অব্যাহত রাখতে জোরদাবী। সকল শ্রেনীপেশার মানুষের দাবি উন্নয়নের দ্বারা অব্যাহত রাখতে সরকারের মান অক্ষুন্ন রাখতে সমপোযোগী দাবি।
ডিবিএন/ডিআর/মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান