এতিম ও প্রতিবন্ধীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিতব্য রঙিন আলোকসজ্জা আর কাগজের ফুলে সাজ সজ্জায় রব। দেখে মনে হচ্ছে যেন বিয়ে বাড়ি। বাস্তবেই সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের এই কেন্দ্রটি আজ বিয়ে বাড়িতেই পরিণত হয়েছে। এখানে বেড়ে উঠা দুই অনাথ মেয়ে শাকিলা ও নয়ন তারার বিয়ে হলো গেল বৃহস্পতিবার।
গেল বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে সিলেটের ওসমানীনগরের বর আল আমিনের সঙ্গে কনে শাকিলা ইসলাম ও মৌলভীবাজার সদরের কনকপুরের বর মো. সাব্বির এর সঙ্গে কনে নয়ন তারার বিবাহ সম্পন্ন হয়। মা, বাবা ও ঠিকানাহীন এই দুই কন্যার অভিভাবক হয়ে বরের হাতে তুলে দেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান। বিয়েতে উপহার হিসেবে নববিবাহিত দুই পরিবারকে নগদ এক লাখ করে মোট দুই লাখ টাকা উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শাকিলা ও নয়ন তারার বিয়ে দেখে উৎফুল্ল এই কেন্দ্রে থাকা আরও ত্রিশ চল্লিশটি মেয়েও। তারাও তাদের দুই সহনিবাসীর জন্য শুভ কামনা জানাচ্ছেন। এতিম মমতা বেগম বলেন, তাদের দুই জনের বিয়ে হচ্ছে দেখে আমরা আনন্দিত। আমরা আশা করছি আমরা এখানে যারা আছি, তারা এভাবে নতুন করে জীবন ফিরে পাবো। আমরা আমাদের পরিবার হারিয়েছি কিন্তু নতুন করে আবার বাঁচতে পারবো।
এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, যখন বিয়ের প্রস্তাব আসে, তখন পাত্র পক্ষ ও পাত্রী উভয়ের মতামত আমরা নিয়েছি। আমার শাকিলা সেলাই শিখেছে আর নয়ন তারা সেলাই ও ড্রাইভিং জানে। তারা যেমন সুন্দর তেমনি দক্ষও। আমরা আজ সুন্দরভাবে তাদের নববিবাহিত জীবনের পদার্পণ করে দিলাম।
বিয়ে ও গায়ে হলুদে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, নারী সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, লেডিস ক্লাবের সভাপতি কবিতা ইয়াসমিন, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ সাইফুর রহমান বাবুল প্রমুখ।
জানা যায়, শাকিলা ও নয়ন তারা বাল্য কালেই হারিয়ে যায়। তাদের বাবা-মাসহ তাদের নেই কোনো পরিচয়। বড় হয়েছে সরকারি শিশু পরিবারে। যখন ১৮ বছর বয়স হয়, তখন তাদের নিয়ে আসা হয় মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্ধীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এরপর তাদের বিয়ের আলাপ আসে। এগিয়ে এলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান। বরপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ধার্য করলেন বিয়ের দিন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও বিয়েতে উপহার হিসেবে নগদ দুই লাখ টাকা উপহার পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান বলেন, আমাদের মৌলভীবাজারের জন্যও আনন্দের একটি দিন, কারণ আমাদের শিশু পরিবারের শাকিলা ও নয়ন তারার বিয়ে হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজসেবা অফিস এটির আয়োজন করেছে। গতকাল তাদের গায়ে হলুদ হয়েছে আজ তাদের বিয়ে হচ্ছে। তাদের আগামীর জীবন ফুলে ফলে সুরভিত হোক, আমরা সেই কামনা করি। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি শুভ কামনা জানিয়ে এক লাখ করে দুইজনকে দুই লাখ টাকা উপহার দিয়েছেন। এভাবে আমরা আমাদের এই শিশু পরিবারের সদস্যদের ভবিষৎ উন্নয়নের জন্য যথাযত সম্ভব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।