নূর মোহাম্মদ সম্রাট, বগুড়া প্রতিনিধিঃ টিম ডিবি বগুড়া’র অভিযানে সারিয়াকান্দি প্রেম যমুনার চরের চাঞ্চল্যকর অটোরিক্সা চালক মেহেদী হাসান হত্যার ৭২ ঘন্টার মধ্যে মূল রহস্য উদঘাটন, হত্যাকান্ডে জড়িত ৩ আসামী গ্রেপ্তারসহ মৃত মেহেদীর ব্যবহৃত অটোরিকশা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ৩১/১০/২০২১ খ্রিঃ সারিয়াকান্দি থানাধীন প্রেম যমুনা চরে জেলেরা মাছ ধরতে গেলে একটি মৃত দেহ দেখতে পায় এবং বিষয়টি তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে মোবাইল ফোনে সারিয়াকান্দি থানা পুলিশকে অবহিত করে। সারিয়াকান্দি থানা পুলিশ তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে মেহেদীর মৃত দেহ উদ্ধার, পরিচয় সনাক্তকরণ এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে।
উল্লেখিত বিষয়ে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানার মামলা নং-১৭, তাং-৩১/১০/২০২১ ইং, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড এর প্রেক্ষিতে বগুড়া জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম সেবা মহোদয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জনাব আলী হায়দার চৌধুরী এর তত্ত্বাবধানে ০২/১১/২০২১ খ্রিঃ বিভিন্ন সময়ে নিখুত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি বগুড়া’র ইনচার্জ মোঃ সাইহান ওলিউল্লাহ এর নেতৃত্বে ডিবি বগুড়া’র একটি চৌকস টিম বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত তদন্তে প্রাপ্ত ৩ আসামীকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- ১। মোঃ শাকিব হাসান (২৪), পিতা মৃত মোখলেছার রহমান, মাতা মোছাঃ নাজমা খাতুন, সাং নারুলী মধ্যপাড়া সুলতান পট্রি (শহিদুল এর বাসার ভাড়াটিয়া) থানা ও জেলা বগুড়া, ২। মোঃ আপেল প্রাং (২০), পিতা মোঃ ছালাম প্রাং, মাতা মোছাঃ মুগলী বেগম, সাং সাবগ্রাম কুরশাপাড়া, থানা ও জেলা বগুড়া এবং ৩। মোঃ সোহেল রানা (২৩), পিতা মোঃ নুর আলম, মাতা মোছাঃ বুলি বেগম, সাং নারুলী মধ্যপাড়া (ভাড়াটিয়া), থানা ও জেলা বগুড়া, স্থায়ী সাং কামারপাড়া, থানা ও জেলা গাইবান্ধা।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের কাছ থেকে- ১। একটি ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা। (যা মৃত মেহেদী হাসানের ব্যবহৃত) ও ২। একটি SYMPHONY মোবাইল ফোন (যা মৃত মেহেদী হাসানের ব্যবহৃত) উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত তদন্তে প্রাপ্ত আসামিগণ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান যে, মৃত মেহেদী হাসান (২৫) বগুড়া শহরে ব্যাটারী চালিত অটো চালাইয়া জীবিকা নির্বাহ করে। পূর্বেই আসামীগণ অটো রিক্সাটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন তারা পরস্পর যোগসাজসে ইং ৩০/১০/২০২১ তারিখ দুপুর অনুমান প্রায় ১২.৩০ ঘটিকার সময় বগুড়া চেলোপাড়াস্থ চাষীপাড়া ব্রিজের উপরে মেহেদী হাসানকে আসামী শাকিব হাসান মোবাইল ফোনে ডেকে আনে। ঐ ব্রিজের উপর হইতে আসামী শাকিব হাসান ও আপেল প্রাং মেহেদী হাসানের তিনচাকা বিশিষ্ট ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সায় উঠে এবং আসামী শাকিব হাসান মোবাইলে আসামী সোহেলের সাথে যোগাযোগ করে সাবগ্রাম বাইপাস মোড় গামী রোডে জাহাঙ্গীরের চা ষ্টলের সামনে হতে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
পরে গ্রেফতারকৃত তদন্তে প্রাপ্ত-১। মোঃ শাকিব হাসান, ২। মোঃ আপেল প্রাং, ৩। মোঃ সোহেল রানা-গন মেহেদী হাসান সহ সারিয়াকান্দী প্রেম যমুনার ঘাটে অটো রিক্সা রেখে নৌকা যোগে নদী পার হয়ে সারিয়াকান্দী থানাধীন যমুনা নদীর পশ্চিম পার্শ্বে চরে দিঘলকান্দী মৌজাস্থ জনৈক মোঃ আমিরুল ইসলাম, পিতা মৃত আনার আকন্দ, সাং দিঘলকান্দী এর ধান ক্ষেতের পশ্চিমে চরে পাথারের নল ঝাড় সংলগ্ন পূর্ব পার্শে ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করতে থাকাকালে উল্লেখিত আসামীগন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বেলা প্রায় ১৪.৫০ ঘটিকার সময় ধারালো চাকু দিয়ে মেহেদী হাসানের গলায়, মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যপুরি ছুড়িকাঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
হত্যার পর তাহারা মেহেদী হাসানের ব্যাবহৃত মোবাইল ফোন ও ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সাটি নিয়ে বগুড়ায় চলে আসে। ১নং আসামী শাকিব হাসান শহরের বিভিন্ন স্থানে উক্ত অটো রিক্সাটি বিক্রয়ের জন্য চেষ্টা করে। কিন্ত বিক্রি করিতে না পারায় বগুড়া জেলার সদর থানাধীন চকসূত্রাপুর কসাইপাড়াগামী সোলিং রাস্তার পার্শ্বে হইতে ১নং আসামী শাকিব হাসানের দেখানো মতে উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ১নং আসামী শাকিব হাসানকে আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সদর থানাধীন নারুলী মধ্যপাড়াস্থ ভাড়া বাসার টিন সেট ঘরের মধ্যে বালিশের নিচ হইতে আসামীর নিজ হাতে বাহির করিয়া দেওয়া মতে মৃত মেহেদী হাসানের ব্যাবহৃত একটি সিম বিহীন SYMPHONY মোবাইল সেট উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। ধৃত আসামীগণ কুখ্যাত ছিনতাইকারী।
উল্লেখ্য যে, আসামি মোঃ শাকিব এর বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় ডাকাতির প্রস্তুতির ১টি, আসামী মোঃ আপেল এর বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় অস্ত্র ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলাসহ ২টি এবং আসামী মোঃ সোহেল এর বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় ডাকাতির প্রস্তুতির ২টি মামলা আছে।
এছাড়া, ২ জন আসামি বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।