সেই ১৯৯২। গুনে গুনে ২৭ বছর। সবশেষ সেবারই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। অবশেষে ভাগ্যের শিকে ছিড়লো। চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে বীরদর্পে ফাইনালে পা রাখলো ইংলিশরা। অথচ একটা সময় সেমিতে তাদের সেমিতে উঠা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছিল।
সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া পা রাখা মানেই বিশ্বকাপের রঙ হলুদ। এতদিনের এই অঘোষিত রীতি বদলে দিলো ইংলিশরা। এখন পর্যন্ত ৭ বার সেমিতে পা রেখে শুধুমাত্র ১৯৭৫ সালের প্রথম বিশ্বকাপে এবং ১৯৯৬ সালের আসরে শিরোপা জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। তবে সেমিতে কখনোই হারেরি। এবার অজিদের সেই দম্ভ এবার চূর্ণ হলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ৮ উইকেটের হারে।
এর আগে মোট তিন বার (১৯৭৯, ১৯৮৭, ১৯৯২) ফাইনালে উঠলেও চ্যাম্পিয়নের ট্রফিটা ঘরে তুলতে পারেনি ক্রিকেটের জনকরা। ঘরের মাটিতে এবার তাই বড় সুযোগ ইংলিশদের। রোববার (১৪ জুলাই) লর্ডসে তাদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। সবশেষ ২০১৫ সালে ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেনি কিউইরা। এবার তাই প্রথম শিরোপা জয়ের সুযোগ তাদের সামনেও।
বার্মিংহামে এদিন আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলে উঠেছিলো মরগান বাহিনী। টস হারলেও তার কোনো প্রভাব পড়তে দেননি বোলারা। শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরে অলআউট করে দেয় মাত্র ২২৩ রানে। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে তেমন ঘামই ঝরাতে হয়নি স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের। দুই ওপেনারের ১২৪ রানের জুটিই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। জনি বেয়ারস্টোকে তুলে নিয়ে স্বদেশি গ্লেন ম্যাকগ্রাথকে ছাড়িয়ে এক আসরে সবেচেয়ে বেশি (২৭) উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়লেও দলকে জয় এনে দিতে পারেননি মিচেল স্টার্ক।
কি দারুন ব্যাটিংটাই না করছিলন! স্কোরকার্ডে জেসন রয়ের নামের পাশে ৮৫ রান। তার সেঞ্চুরিরর অপেক্ষায় থাকা সমর্থকদের বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো প্যাট কামিন্সের বাউন্সে। রয় ফিরে আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখতে হলো তার আঙুল তোলা। মুখভঙিতে ঘোর আপত্তি জানালেও রিভিউ না থাকায় তাকে বিদায় নিতে হলো। পরে অবশ্য টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, উইকেটের পেছনে অ্যালেক্স কারির গ্লাভসে যাওয়ার আগে রয়ের ব্যাট ছোঁয়নি বলটি।
২ উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে সাময়ীক স্বস্তি ফিরলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হতে দেননি অধিনায়ক ইয়ন মরগান এবং জো রুট। এ দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ড জয়ের বন্দরে পৌঁছে ১০৭ বল হাতে রেখেই।
এর আগে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সামনে মামুলি টার্গেট দাঁড় করায় অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করতে নেমে ২২৩ রানে অলআউট হয় অজিরা।
টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। নিজের সিদ্ধান্তকে নিজেই ভুল প্রমাণিত করে শূন্য রানে বিদায় নিলেন ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই। অধিনায়কের পথ ধরলেন আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারও। ক্রিস ওকসের বাউন্সার সামলাতে না পেরে উইকেটের পেছনে জনি বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মাত্র ৯ রানে। উসমান খাজার ইনজুরির সুবাদে বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া পিটার হ্যান্ডসকম্বের বিদায়ে সংকটের অথৈ সাগরে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
৬ ওভারে ১৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর অ্যালেক্স কারিকে নিয়ে হাল ধরেন স্টিভ স্মিথ। তাদের ১০৩ রানের জুটি ভাঙে ৪৬ রানে কারির বিদায়ে। স্মিথ হাত খুলতে শুরু করলেও আবার খোলসের মধ্যে ধুকে পড়তে হয় মার্কাস স্টইনিশ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং প্যাট কামিন্সদের দ্রুত বিদায়ে।
শেষ দিকে মিচেল স্টার্ককে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকায় গতি আনছিলেন। কিন্তু তিন ওভার বাকি থাকতে স্মিথ যখন রান আউটের ফাঁদে পড়েন তখন তার সেঞ্চুরি পূরণ হতে বাকি ১৫ রান। ১১৯ বলে ৮৫ রানের লড়াকু ইনিংসটিতে মাত্র ৬টি বাউন্ডারি হাঁকান অজিদের সাবেক অধিনায়ক।
স্মিথের বিদায়ের পর নির্ধারিত ৫০ ওভার খেলতেই পারেনি পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এক ওভার বাকি থাকতেই ২২৩ অলআউট হয় তারা।
বল হাতে ৩টি করে উইকেট তুলে নেন ক্রিস ওকস এবং আদিল রশিদ। এছাড়া জোফরে আর্চার ২টি এবং ১টি উইকেট নেন মার্ক উড।
স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ২২৩/১০ (৪৯)
ডেভিড ওয়ার্নার ৯ (১১)
অ্যারন ফিঞ্চ ০ (১)
স্টিভ স্মিথ ৮৫ (১১৯)
পিটার হ্যান্ডসকম্ব ৪ (১২)
অ্যালেক্স কারি ৪৬ (৭০)
মার্কাস স্টইনিশ ০ (২)
গ্নেন ম্যাক্সওয়েল ২২ (২৩)
প্যাট কামিন্স ৬ (১০)
মিচেল স্টার্ক ২৯ (৩৬)
জেসন বেহেনডরফ ১ (৪)
নাথান লায়ন ৫* (৬)
অস্ট্রেলিয়া ২২৩/১০ (৪৯)
ডেভিড ওয়ার্নার ৯ (১১)
অ্যারন ফিঞ্চ ০ (১)
স্টিভ স্মিথ ৮৫ (১১৯)
পিটার হ্যান্ডসকম্ব ৪ (১২)
অ্যালেক্স কারি ৪৬ (৭০)
মার্কাস স্টইনিশ ০ (২)
গ্নেন ম্যাক্সওয়েল ২২ (২৩)
প্যাট কামিন্স ৬ (১০)
মিচেল স্টার্ক ২৯ (৩৬)
জেসন বেহেনডরফ ১ (৪)
নাথান লায়ন ৫* (৬)
বোলার
ক্রিস ওকস ৮-০-২০-৩
জোফরে আর্চার ১০-০-৩২-২
বেন স্টোকস ৪-০-২২-০
মার্ক উড ৯-০-৪৫-১
লিয়াম প্লাঙ্কেট ৮-০-৪৪-০
আদিল রশিদ ১০-০-৫৪-৩
ক্রিস ওকস ৮-০-২০-৩
জোফরে আর্চার ১০-০-৩২-২
বেন স্টোকস ৪-০-২২-০
মার্ক উড ৯-০-৪৫-১
লিয়াম প্লাঙ্কেট ৮-০-৪৪-০
আদিল রশিদ ১০-০-৫৪-৩
ইংল্যান্ড ২২৬/২ (৩২.১)
জেসন রয় ৮৫ (৬৫)
জনি বেয়ারস্টো ৩৪ (৪৩)
জো রুট ৪৯* (৪৬)
ইয়ন মরগান ৪৫* (৩৯)
জেসন রয় ৮৫ (৬৫)
জনি বেয়ারস্টো ৩৪ (৪৩)
জো রুট ৪৯* (৪৬)
ইয়ন মরগান ৪৫* (৩৯)
বোলার
জেসন বেহেনডরফ ৮.১-২-৩৮-০
মিচেল স্টার্ক ৯-০-৭০-১
প্যাট কামিন্স ৭-০-৩৪-১
নাথান লায়ন ৫-০-৪৯-০
স্টিভ স্মিথ ১-০-২১-০
মার্কাস স্টইনিশ ২-০-১৩-০
জেসন বেহেনডরফ ৮.১-২-৩৮-০
মিচেল স্টার্ক ৯-০-৭০-১
প্যাট কামিন্স ৭-০-৩৪-১
নাথান লায়ন ৫-০-৪৯-০
স্টিভ স্মিথ ১-০-২১-০
মার্কাস স্টইনিশ ২-০-১৩-০
ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।