প্রায় ১৭ বছর পর সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো খুনের দায়ে অভিযুক্ত এক আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৭ মিনিটে (স্থানীয় সময়) ইন্ডিয়ানার টেরে হাউতি কারাগারে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে কার্যকর করা হলো ড্যানিয়েল লুইস লি’র মৃত্যুদণ্ড।
দেশটি সুপ্রিম কোর্টে পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজা কার্যকরের পক্ষে ৫-৪ ভোটের রায় আসে। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, তারা পুনরায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু করবে। মঙ্গলবার সকালের দিকে ইন্ডিয়ানার টেরে হওতের একটি কারাগারে প্রাণঘাতী ইনজেকশন প্রয়োগে ড্যানিয়েলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
কারাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষাক্ত ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবি করেছেন ড্যানিয়েল। চিৎকার করে বলেছেন, ‘আমি খুন করিনি। জীবনে অনেক ভুল করেছি, কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি খুনি নই। একজন নির্দোষ মানুষকে আপনারা খুন করছেন।’ কিন্তু তাঁর আর্ত চিৎকারে কর্ণপাতই করেননি চিকিৎসকরা।
তবে ড্যানিয়েল লি’র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ওকলাহোমা রাজ্যের ইউকোনের বাসিন্দা ডানিয়েল লি ১৯৯৬ সালে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে আরকানসাসের অস্ত্র বিক্রেতা উইলিয়াম মুয়েলার, তার স্ত্রী ন্যান্সি ও তাদের একমাত্র মেয়ে অষ্টাদশী সারাহ পাওয়েলকে খুন করেছিল। সেই মামলায় ড্যানিয়েলকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন বিচারক। সোমবার ইণ্ডিয়ানার টেরে হাউতি কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছিল। ৪৭ বছর বয়সী লি’র শরীরে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।
কিন্তু মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে রীতি অনুযায়ী লি’র সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল তার পরিজনদের। কিন্তু ইন্ডিয়ানার ফেডারেল আদালতের মুখ্য বিচারক জেন মাগুনাসের এজলাসে লি’র পরিজনরা এক আর্জি দাখিল করে জানান, করোনা মহামারীর কারণে তাঁদের পক্ষে লি’কে শেষবারের দেখার জন্য আসতে পারছেন না। তাই যতদিন না মহামারীর প্রকোপ শেষ হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত যেন মৃত্যুদণ্ড পিছিয়ে দেওয়া হয়। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিচারক মাগুনাস লি’র মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখার আদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘যতদিন না করোনা মহামারীর প্রকোপ শেষ না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড স্থগিত থাকবে।’
ফেডারেল আদালতের বিচারকের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সোমবার দীর্ঘক্ষণ মামলার শুনানি শেষে মধ্যরাতে রায় দিতে গিয়েও বিভক্ত হয়ে পড়ে ৯ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। পাঁচ বিচারপতি অবিলম্বে ড্যানিয়েল লি’র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পক্ষে রায় দেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে আর দেরি করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। সকালে মার্কিনবাসীর ঘুম ভাঙার আগেই লি’র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।