সংবাদটি বিশ্বাস হচ্ছিলনা কারোরই। বংবন্ধুকে হত্যা করার সাহস দেখাবে এমন কথা বিশ্বাস করারও কথানা। রেডিওতে প্রথমে মেজর ডালিম এবং পরে সরকার কবির উদ্দিন বিক্ষিপ্তভাবে ঘোষনা দিচ্ছে তখন। মহল্লায় মহল্লায় মানুষ জড়োহয়ে রয়েছে রেডিওর সামনে। এই ঘোষনাকালে সৈন্যদের ভয়ের কন্ঠটিও বোঝা যাচ্ছিল। কখনো কারফিউর কথা বলছে, আবার কখনো জনগনকে শান্ত থাকার ঘোষনা দিচ্ছে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে একজন একজন করে রেডিওতে এসে নতুন সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্যের কথা ঘোষনা করছে। মেঃ জেঃ শফিউল্লাহ, এয়ার ভাইস মার্শাল এক কে খন্দকার এবং রিয়ার এডমিরাল মোশারফ হোসেনরা নতুন সরকারের পক্ষে জনগনকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিচ্ছে। সান্ধ আইন জারি করা হলেও সকাল ১০ টার পর থেকে ঢাকা শহরে লোকজন হাটাহাটি শুরু করেছে। রাস্তায় শুধু মিলিটারি গাড়ী রাইফেল তাক করে দ্রুত ছুটে যাচ্ছে এদিক ওদিক। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যাংক অবস্থান নিয়েছে। তখনও নানা গুজব ছড়াচ্ছে লোকমূখে কিন্তু, মেজর ডালিমের নামটাই বেশী শুনেছে মানুষ। রেডিও তখনো বাংলাদেশ বেতার নামেই ঘোষনা হচ্ছে। কয়েক ঘন্টা পর বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে রেডিও বাংলাদেশ হয়ে গেল। তারপর খন্দকার মুশতাক রেডিওতে ভাষন দিলেন। মুশতাকের ভাষনে সরকার পরিবর্তনের কথা বললেও একবারের জন্যও বংগবন্ধুর নামটি উচ্চারন করেনি। কি ঘটেছে তাও বলেনি খুনী মুশতাক। যারা খুন করেছে তাদেরকে দেশপ্রেমিক সেনা বলে উল্লেখ করেছে মুশতাক। জাতীয় প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সাহসী দায়িত্ব পালন করায় খুনিদের প্রশংসা করেছে মুশতাক। বার বার বিশ্ববাসির কাছে স্বীকৃতি চেয়েছে। সেদিন কেউ সাহাস করে বেড় হলে এই খুনীরা দেশ ছেড়ে পালাত। একমাত্র মেজর জামিল ছাড়া আর কেউ বেড়িয়ে আসেনি সেদিন। দলের নেতারাও রা টি করেননি। ৪৫ বছর পর অনেকেরই বক্তব্য শুনে অবাক হই, মনে প্রশ্ন জাগে সেদিন তারা নিরব রইলেন কেন? কথায় কথায় দলের জন্য ত্যগের কথা বলে যারা হুংকার দেন, ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট তারা হুংকার দিলে ইতিহাস আজ ভিন্নভাবে লেখা হত। একমাত্র কাদের সিদ্দিকি সেদিন অস্ত্রহাতে যুদ্ধে নেমেছিলেন। ১৬ বছর নির্বাসনে ছিলেন, দেশে ফিরতে পারেননি। জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হলো, এবারও রা টি করলোনা কেউ। বংগবন্ধুর কাছে ষড়যন্ত্রের খবরটিও পৌঁছালনা। যাদের উপর নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল তারা অনেকেই মুশতাক সরকারের নানা পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। বংগবন্ধুকে যারা গুলি করেছে, তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে কিন্তু, প্রকৃত অপরাধীরা এখনো জীবিত। কারাকারি করেছে মুস্তাকের মন্ত্রীসভায় স্থান পেতে, এখন তারা মুজিবপ্রেমে শহিদ হন। এমন নেতারা এখনো আছে, শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিতে এখনো তারা তৎপর। কিন্তু প্রকৃত বংবন্ধু প্রেমিকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে, আর কোন ষড়যন্ত্রই সফল হবেনা। এটা ৭৫ সালও না।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
১২ জুলাই ২০২০।