স্টাফ রিপোর্টারঃ আরাফাত আহমেদ রনি
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সৌদি মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবে খুব শ্রীঘই বাতিল হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত কাফালা ও কফিল প্রথা। নির্দিষ্ট কোন সৌদির মোয়াচ্ছা বা নামে থেকে বাইরে কাজ করা, বা তার নামে ব্যবসা করা, বিনিময়ে ওই সৌদি নাগরিক মাসে মাসে একটা লভ্যাংশ নেয়া, এ প্রথাটি বিলুপ্ত করতে যাচ্ছে সৌদি মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়।
কাফালা প্রথা-এমন এক প্রথা, যেখানে যে কোন প্রবাসীই কোন না কোন সৌদি নাগরিকের নামে থেকে কাজ করবেন। অথবা তার নামেই ব্যবসা করবেন। বিনিময়ে তাকে দেবেন লাভের একটা অংশ প্রতিমাসে। কাফালা প্রথাতে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় প্রবাসীদের। অনেক ক্ষেত্রেই সৌদি নাগরিক বা কফিল প্রবাসীর অধিকার বা হক রক্ষা না করে, প্রবাসীর অর্থ লোপাট করে নিজেই লাভবান হন। সৌদি আরবে কাফালা বা কফিল প্রথায় লাখো লাখো প্রবাসী বাংলাদেশিসহ কফিলের অন্যায়ের শিকার হয়ে অবৈধ হয়েছেন এবং অনেকে সৌদি আরবে অবৈধ অনিশ্চিত জীবনে আটকে পড়ে আছেন। তাই, কাফালা বা কফিল প্রথা বাতিল হলে প্রবাসীরা সরাসরি শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধিনে চলে যাবেন।
শ্রম মন্ত্রণালয়-ই হবে তখন প্রবাসে প্রবাসীর অভিভাবক। শ্রম মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট অর্থ অবশ্যই নেবেন , তবে সেক্ষেত্রে প্রবাসীর অর্থ লোপাট এবং অবৈধ হবার সম্ভাবনা নেমে আসবে প্রায় শূন্যের কোঠায় । সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়, দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টির উপর বিচার বিশ্লেষণ করে, শেষ পর্যন্ত কাফালা প্রথা বিলুপ্তির ঘোষণা খুব দ্রুত কার্যকর করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ীদের একটা বিরাট অংশ ভয়ে তটস্ত থাকেন, তার কফিল কখন না জানি অন্যায় আবদার করে মোটা অংকের টাকা চেয়ে নেয় । অথবা কখন জানি তাকে বঞ্চিত করে নিজেই ব্যবসার দখল নিয়ে নেয়। যেহেতু দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কফিলের নামে, সেহেতু এরকম ঘটনায় আইনের সহায়তাও খুব বেশি পাওয়ার সুযোগ থাকে না । কাফালা প্রথা বিলুপ্তির পর, ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নিজেদের কাগজপত্র নিজেরাই করে নিতে পারবেন। এবং নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারানোর ভয় আর থাকবে না । ইকামা নবায়ন, স্বাধীনভাবে এক্সিট -রিএন্ট্রি ভিসা গ্রহণ, ইত্যাদি অনেক কাজই প্রবাসী কফিলের কোন বাধ্যবাধকতা ছাড়াই করতে পারবেন। শ্রম এবং মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণামতে, আগামী সপ্তাহে কাফালা ও কফিল প্রথা বাতিলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে।এবং ২০২১ সালের প্রথম ৬ মাসেই বিলুপ্তির ঘোষণা কার্যকর করা হবে। ২০১৮ সালের ১৪ মে এবিষয়ে মন্ত্রী সভায় একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।এটা কার্যকর হলে দেশটিতে বসবাসরত প্রায় ১০ মিলিয়নের বেশী প্রবাসীরা সুফল ভোগ করবে। কারণ আর কোন প্রবাসীকে অকারণে হুরুপ বা হুমকি দিতে পারবেনা।