রাজনীতি ডেস্কঃ আজ সোমবার (০৩ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০১৯ সালের এই দিনে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তখন বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। দিবসটি স্মরণে আজ ঢাকায় পরিবারের পক্ষ থেকে ও কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালন হবে।
সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে সৈয়দ আশরাফের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ‘সৈয়দ আশরাফ স্মৃতি পরিষদ’। সকালে কিশোরগঞ্জ শহরের সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে সৈয়দ আশরাফের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জেলা আওয়ামী লীগ। বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আলোচনাসভা ও মিলাদ মাহফিল হবে।
সৈয়দ আশরাফের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির অভিযোগ কখনোই শোনেননি কেউ। এমনকি কথাবার্তাতেও ছিলেন পরিমিত। পারিবারিক ভাবেই আওয়ামী লীগের হাত ধরে বেড়ে ওঠা সৈয়দ আশরাফ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে আওয়ামী লীগকে সামলেছেন বহু দুর্যোগে-দুর্বিপাকে। ২০০৭ সালে দেশে ওয়ান ইলেভেনের সরকার। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা, তখনকার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের অনেক শীর্ষ নেতাই গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোসের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। দলের এমন দুঃসময়ে যোগ্য কাণ্ডারি হিসেবে হাল ধরেন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সেই থেকে সৈয়দ আশরাফের দৃঢ়তায় ভরসা পায় আওয়ামী লীগ। ২০০৯ ও ২০১২ সালের কাউন্সিলে আশরাফ দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৩ তে হেফাজতের তাণ্ডব সামাল দেয়াসহ ২০১৪র নির্বাচনে দেশি বিদেশী নানা চাপ দক্ষ হাতে সামাল দেন সৈয়দ আশরাফ।
সৈয়দ আশরাফ ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্যতম সংগঠক ছিলেন। সৈয়দ আশরাফ ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
আশরাফুল ইসলাম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুক্তিবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। ভারতের দেরাদুনে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭৫ সালে সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাজ্যে চলে যান সৈয়দ আশরাফ। সেখানে তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৯৬ এ দেশে ফিরে কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয় পান আশরাফ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি এক কন্যার জনক। মেয়ের নাম সৈয়দা রীমা ইসলাম। তাঁর স্ত্রী শিলা ইসলাম ২০১৭ সালের অক্টোবরে মারা যান।