মো আমিন আহমেদ, সিলেট প্রতিনিধি: দেশে এর আগের বিভিন্ন মহাসড়ক চার লেইন করতে যে ব্যয় হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় হতে যাচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করতে। প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য এই সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠতে যাচ্ছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
প্রকল্প প্রস্তাবটি ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মুল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সায় পেয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন -আল- রশিদ বলেন, “ওই বৈঠকে প্রকল্পটির ব্যয় ও যৌক্তিকতা বিচার-বিশ্লেষণ করে একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।”
প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চার লেইনের সড়ক নির্মাণের দিক দিয়ে প্রকল্পটিতে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রায় ২১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ধরা হবে ৮০ কোটি টাকার বেশি।
এর আগে, গত বছরের ২৭ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া ‘ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক চার লেইনে উন্নীত করতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। ওই প্রকল্পে সড়কটি নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৮৬ কোটি টাকারও বেশি। তবে ওই প্রকল্পে ১৫১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বাবদ প্রায় ৮১৮ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় ছিল।
ওই প্রকল্প অনুমোদনের পর সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের তৎকালীন সদস্য শামীমা নার্গিস বলেছিলেন, প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কটিতে ‘স্মার্ট হাইওয়ে’ হিসেবে নির্মাণে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল (ওএসি) স্থাপন এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস) স্থাপন করায় ব্যয় বেশি হচ্ছে।
চলমান সিলেট-তামাবিল সড়ক চার লেইন প্রকল্পের প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৬৪ কোটি টাকা। সেখানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে তার চেয়ে ১৬ কোটি টাকা বেশি।
ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মামুন-আল রশিদ বলেন, “এই সড়কটি আসলে দেশের অন্যান্য চার লেইনের সড়কের মতো নয়। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে চার লেইনের পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে কম গতির যানবাহন চলাচলের জন্য দুটি সার্ভিস লেন থাকবে। এছাড়া ওই এলাকায় অন্যান্য এলাকার তুলনায় পানির প্রবাহ বেশি থাকায় সেতু ও কালভার্টের সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি। এই কারণেও ব্যয় কিছুটা বেড়েছে।”
পরিকল্পনা কমিশনের এই সদস্য বলেন, “সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় প্রথমে এ প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো প্রস্তাব করেছিল। আমরা পিইসি সভায় প্রকল্পটির বিচার বিশ্লেষণ ও কাটছাঁট করে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা কমিয়েছি।”
ভারত, বাংলাদেশসহ ছয় দেশ নিয়ে গঠিত দক্ষিণ এশিয়া উপ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক) বাড়াতে সরাসরি সড়ক অবকাঠামো তৈরির উদ্দেশ্যে ঢাকা- সিলেট মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করছে সরকার।
এডিবির অর্থায়নে ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে দ্রুতই কাজ শুরু করে আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের সড়ক পরিবহণ নেটওয়ার্ক যথাযথ মানে উন্নীত করে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, বিমসটেক করিডোর, সার্ক করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্তির মাধ্যমে শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা আনাসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রস্তাবে আরও বলা হয়, টেকসই সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার দেশব্যাপী জাতীয় মহা সড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেইন করার পাশাপাশি বিদ্যমান সড়কগুলো ক্রমান্বয়ে চার লেইনে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এডিবি‘র আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দেশব্যাপী ১ হাজার ৭৫২ কিলোমিটার মহাসড়কের সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এই সমীক্ষার আওতায় ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটিও রয়েছ।
প্রস্তাবে বলা হয়, “উপাঞ্চলিক যোগাযোগ বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও চীনসহ ছয়টি দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সড়কটি উপাঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে যোগাযোগের প্রধান করিডোর হওয়ায় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। উপাঞ্চলিক উন্নয়ন বিবেচনায় এডিবি অগ্রাধিকার তালিকায় এই সড়কটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”