দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সিলেট কারাগারে আরেকজনের পরিচয়ে কারারক্ষীর চাকরি করা জহিরুলকে সরিয়ে প্রকৃত জহিরুলকে কেন নিয়োগ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে সারাদেশের কারাগারে কারারক্ষী পদে ৮৮ জনের নিয়োগে জালিয়াতির ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা এক মাসের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আইজি প্রিজন্সকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। সঙ্গে ছিলেন মো. আবুল কালাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
জানা যায়, ২০০৩ সালে কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলেন কুলাউড়ার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম এশু। নিয়োগে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয়েছিল। কিন্তু পরে আর যোগদানপত্র না পাওয়ায় চাকরির আশা ছেড়ে শহরে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছর পর জানতে পারেন প্রতারণার মাধ্যমে তার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ওই পদে আরেকজন চাকরি করছেন। এরইমধ্যে জালিয়াতির বিষয়টির তদন্তেও সত্যতা পাওয়া যায়।
সিলেটের কারা উপ মহাপরিদর্শক কামাল হোসেনের নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার এজি মাহমুদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল সুপার ইকবাল হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে।
এর মধ্যে জহিরুল ইসলাম এশু চাকরি ফিরে পেতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনে সাড়া না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। রিটে কারারক্ষী পদে আবেদনকারীর যোগদানপত্র গ্রহণে এবং আবেদনকারীর পদে চাকরি করা অন্য জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে কেন ৫ বিবাদীকে নির্দেশনা দেওয়া হবে না, মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। রিটে বিবাদী হিসেবে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব, কারা মহাপরিদর্শক, কারা উপ মহাপরিদর্শক, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার, কারারক্ষী হিসেবে চাকরিরত জহিরুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুইশ জন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের জাল-জালিয়াতি বা একজনের স্থলে আরেকজন শারীরিকভাবে কাজ করছেন বলে গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এরপর এ বিষয়গুলো তদন্ত করে ২০০ জনের মধ্যে ৮৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ৩ জন পাওয়া গেছে, তারা প্রকৃত ব্যক্তির পরিবর্তে কর্মরত। আবার অনেকে রয়েছেন তারা ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন, যেটা ওনাদের প্রকৃত ঠিকানা নয়। আবার অনেকে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্রে জাল-জালিয়াতি করেছেন। এটি ফৌজদারি অপরাধ। এরইমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।