মোঃ আমিন আহমেদ, সিলেটঃ সিলেটে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে করোনা চিকিৎসা দেওয়া হাসপাতালগুলো। এক কোম্পানি সরবরাহ করলে অন্যটি করছে গড়িমসি। সকালে অক্সিজেন সরবরাহের কথা থাকলেও তা দিচ্ছে দুপুরে। এ কারণে মাঝে মধ্যেই চাপ কমে যাচ্ছে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের। তরল অক্সিজেন প্ল্যান্টের ট্যাংকার অর্ধেক হলেই কমে যাচ্ছে চাপ। কিন্তু ট্যাংকার প্রায় খালি হওয়ার আগে অক্সিজেন সরবরাহ করেছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে সার্বক্ষণিক আতঙ্কে থাকে হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ। অক্সিজেন সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গুরুতর অভিযোগ লিন্ডে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তারা সিলেটে একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহ করে। এর মধ্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ (সিওমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার চিঠি দিয়েও পাচ্ছে না নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন।
অন্যদিকে বেসরকারি সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন ট্যাংকার লাগিয়ে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এর কারণ হিসাবে ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার জানান, সিওমেক হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে এককভাবে ১০ হাজার লিটার তরল অক্সিজেন সরবরাহ করত লিন্ডে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে করোনাকালে ঝুঁকি এড়াতে পাশাপাশি স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেডের সঙ্গে ২০ হাজার লিটার অক্সিজেন সরবরাহের চুক্তি করে সরকার। তার ধারণা এ বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি লিন্ডে বাংলাদেশ। তাই নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন দিতে অনীহা তাদের।
যদিও এ বিষয়ে লিন্ডে বাংলাদেশের পক্ষে বেঞ্চমার্ক পিআরের রেহনুমা তারান্নুম এক ইমেইল বার্তায় জানান, লিন্ডে বাংলাদেশ অক্সিজেন সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সার্বক্ষণিক চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী তারা অক্সিজেন সরবরাহ করে যাচ্ছে। তবে চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করতে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন বলে ইমেইল বার্তায় তিনি জানান।
কিন্তু সিওমেক পরিচালক জানান-চুক্তি হয়েছিল নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেনের, সেটা তো পাচ্ছি না। ওসমানী হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহে লিন্ডের এমন আচরণ যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে দেখা যায় তরল অক্সিজেন প্ল্যান্টের পাশেই পার্কিং করা আছে লিন্ডে বাংলাদেশের একটি অক্সিজেনবাহী ট্যাংকার।
হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু শেখর দাস জানান, লিন্ডে তাদের সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সরবরাহ করছে। তাদের একটি ট্যাংকার সব সময় এখানেই থাকে। একটি খালি হওয়ার আগেই আরও একটি ট্যাংকার এখানে চলে আসে। অথচ ওসমানী মেডিকেল কলেজের অক্সিজেন সরবরাহের তালিকা থেকে দেখা যায়- সপ্তাহে ২ দিন সেখানে তাদের ট্যাংকার পাঠায় লিন্ডে বাংলাদেশ। স্বাভাবিক সময়ের মতোই সরবরাহ করে মাত্র ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন। যদিও যুগান্তরের হাতে আসা দুটি চিঠিতে দেখা যায়, ৫ ও ২৫ জুলাই সপ্তাহে অন্তত ২০ হাজার লিটার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য লিন্ডে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চাহিদাপত্র পাঠায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি লিন্ডে বাংলাদেশ।
শুধু লিন্ডে নয়, অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেই সিন্ডিকেটের অভিযোগ আছে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদেরও। সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম আহমেদ যুগান্তরকে জানান, এই মহামারির সময়েও প্রতিষ্ঠানগুলো অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঝুঁকছে। এক প্রতিষ্ঠান থেকে অক্সিজেন নিলে অন্যটি দিতে চায় না অথবা গড়িমসি করে। ঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালগুলোকে বিকল্প ব্যবস্থা রাখতেই হবে। এখন মানুষ বাঁচানোর যুদ্ধ। অক্সিজেন নিয়ে সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।