সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেফতার টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ সাত পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয়।
শুক্রবার ৭ আগস্ট রাতে গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া সাত পুলিশ সদস্যরা হলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল সাফানুর করিম, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া। এর আগে তাদের সবাইকে টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
এর মধ্যে মামলার আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর আসামি এসআই নন্দলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়াকে বরখাস্ত করেছেন পুলিশ সুপার।
গত বুধবার এই সাত পুলিশ সদস্যের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন সিনহা রাশেদের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এই সাত আসামি বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এর পর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে শারমিন ফেরদৌসের করা হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনজনকে (প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী, সাফানুর করিম) সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব। বাকি চারজনকে (নন্দ দুলাল রক্ষিত, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং লিটন মিয়া) জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি পেয়েছে র্যাব। পরে আদেশ পরিবর্তন করে সাতজনকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয় আদালত।
এই মামলার অপর দুই আসামি টুটুল ও মোস্তফাকে পলাতক দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। তার ওপর গুলি চালান বাহারছড়া ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত। এই ঘটনায় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ২০ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। সিনহার বোনের দায়ের করা মামলায় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমারসহ নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওসি প্রদীপসহ আত্মসমর্পণ করে সাতজন বৃহস্পতিবার কারাগারে গেছেন। এর মধ্যে তিনজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব।
দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা এই ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। পেশাদার দুটি বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক কোনো ভুল বোঝাবুঝি যেন সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখছে কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে সেনাপ্রধান ও আইজিপি কক্সবাজার সফর করে জানিয়েছেন, এই ঘটনার দায় পুরো পুলিশ বাহিনীর ওপর নয়, ব্যক্তিবিশেষের। এ ধরনের ঘটনা এটাই শেষ, ভবিষ্যতে আর হবে না বলে পুলিশের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।