বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এসএসসি পাশ করে বড় বড় সরকারি কর্মকর্তা সহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন মর্যাদাশীল জায়গায় দায়িত্ব পালন করা যেত। ঠিক সেই সময় এসএসসি পাস করে চার বছর ছয় মাস লেখাপড়া করে ডাক্তার হওয়া যেত। তৎকালীন এলোপ্যাথির অবস্থা ছিল অনেকটা নাজুক। পরবর্তীতে দেখা যায় শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার বর্তমানে প্রাইমারি স্কুলের চাকরি নিতে গেলে অনার্স পাস প্রয়োজন হয়।এসএসসি ব্যতীত এমবিবিএস ডাক্তার বা অন্য কিছু হওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথি অবস্থা আগে যেরকম ছিল এখনো একই রকম। এখানে ডাক্তারি পড়তে কোন বয়সের প্রয়োজন হয় না। যে কোন বয়সের লোক এসএসসি সার্টিফিকেট মাত্র থাকলেই ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায়।
আমার কথা হচ্ছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় যেটা ছিল সেটা ঠিক কিন্তু আজ সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে হোমিওপ্যাথি শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না কেন? দেখা যায় হোমিওপ্যাথিক কলেজে যে কেউ ভর্তি হতে পারে ভর্তি হওয়ার পরে কোন ক্লাস করানো হয় না বা ক্লাস করার জন্য বাধ্য করা হয় না।বিভিন্ন বয়সের চাকরিজীবী লোক হোমিওপ্যাথি লেখাপড়া করতে পারে। তারা বছরে একবার এসে পরীক্ষা দেয়।বাস্তবতা হচ্ছে পরীক্ষার হলে অধিকাংশ ছাত্র বই নিয়ে যায় দেখে দেখে পরীক্ষা দেয়।
বর্তমান বাংলাদেশি হোমিওপ্যাথি সিস্টেমে এটা যেমন একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরীক্ষার দুই দিন আগে ছাত্ররা বই কিনে পরীক্ষার হলে নিয়ে ঢুকে। এমন কি অধিকাংশ ছাত্ররা যদি পরীক্ষায় কোন সিনোনেম আসে সেটা ধরতে পারে না শিক্ষকরা এ ব্যাপারে তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
অপরদিকে হোমিওপ্যাথি হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও কঠিন চিকিৎসা বিজ্ঞান। বলতে গেলে এমবিবিএস স্টুডেন্টদের চেয়ে এদের সাবজেক্ট এবং পড়া কোন অংশে কম নয়। জেনারেল মেডিকেল সায়েন্সের এনাটমি, ফিজিওলজি,প্যাথলজী, গাইনোকোলজি, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, প্রাকটিস অফ মেডিসিন, মেডিকেল আইন, বিজ্ঞানসহ সকল সাবজেক্ট রয়েছে। এই বিজ্ঞানের অতিরিক্ত রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজারের মতো হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। আরো রয়েছে ফিলোসফি। এখানে রয়েছে ক্রনিক ডিজিজের মত কঠিন সাবজেক্ট।
পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশে হোমিওপ্যাথি লেখাপড়া করতে হলে আগে এমবিবিএস পাশ করতে হয়। আমাদের দেশে হোমিওপ্যাথিক ছাত্রদের যে চরম দুরবস্থা এটা প্রকাশ করলেও অপরাধী হতে হয়। যুগ যুগ ধরে এই নকল যুক্ত দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা চলে আসছে। যারা ভুক্তভোগী তারা না বুঝেই সুযোগ হিসেবে নিয়ে এই চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আজ ধ্বংসের মুখে ফেলেছে।
যেখানে হ্যানিম্যান স্যার বলেছে “কোন মিথ্যাবাদী যেন আমার বক্স স্পর্শ না করে” সেখানে আজ মিথ্যাবাদী দুর্নীতিগ্রস্ত ও নিম্নমানের ছাত্রটা হোমিওপ্যাথ হচ্ছে। মনে হয় হ্যানিম্যান স্যারের বিরুদ্ধে এরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অনেকটাই নীরব বারবার এ ব্যাপারে তাদের লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখেছি বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা যেমন এসএসসি, এসএসসি সহ বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস বা অসধ উপায় অবলম্বন করলে বিভিন্ন পত্রিকা ও জাতীয় মিডিয়ায় সেগুলো প্রচারিত হয়, অপরাধকারীর শাস্তি হয়। কিন্তু এই হোমিওপ্যাথি শিক্ষা ব্যবস্থার এই দুরবস্থা কখনো কোনো পেপার পত্রিকায় প্রচারিত করা হচ্ছে না।
এখানে যারা রয়েছে তারা এগুলো গোপন রেখে তাদের দুর্নীতিগুলো চালিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। অধিকাংশ ডাক্তার এবং স্টুডেন্ট এ ব্যাপারে বলে যে নিজেদের দোষ মানুষের সামনে না বলাই ভালো তাদের এই হীনমান্য তা দেখে খুবই দুঃখ হয়। এই কারণে হোমিওপ্যাথি পিছিয়ে যাচ্ছে সমাধান হচ্ছে না।এই দোষ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে হোমিওপ্যাথি সমাজের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। বাস্তব সম্মত হচ্ছে এই সকল কারণেই আজও হোমিওপ্যাথির কোন রিসার্চ সেন্টার বা একক কোন হসপিটাল গড়ে ওঠেনি।
আমাদের সমাজে কিছু সংখ্যক হো. ডাক্তার রয়েছে তাদের উচ্চ মানের সার্টিফিকেট না থাকলেও তারা অনেক উচ্চ মানের জ্ঞানী তারা রোগীকে নিয়মিতভাবে সেবা দিয়ে আসছে। তাদের মানবিকতা সেবার বৈশিষ্ট্য ও উপকার পেয়ে কিছু মানুষের মুখে হোমিওপ্যাথি সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় ৯৫% নামধারী হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হোমিওপ্যাথির নামে মানুষের কাছে দুর্নাম ছড়াচ্ছে। যারা নকল করে দুর্নীতি পথ অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তীতে সার্টিফিকেট নিয়ে চেম্বার খুলে বসেছে তাদের দ্বারা আজ হোমিওপ্যাথি ধ্বংস হচ্ছে। জনসমাজে একটা কথা খুব বেশি প্রচলিত রয়েছে যে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ” ধীরে কাজ করে” এই ডাক্তাররা মানুষের সামনে এই ভূল তথ্যগুলো প্রচার করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারক ডাক্তার হ্যানিম্যান স্যার তার লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ অর্গান অফ মেডিসিনের দুই নাম্বার সূত্রে বলেছে যে “হোমিওপ্যাথিক ওষুধ, দ্রুত, বিনা কষ্টে ও স্থায়ীভাবে কাজ করে”।
আজ সকল সমস্যার ভিতরে ও হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ডাক্তার শব্দ লেখার সংকটে ভুগছি এই দুঃসময়েও আমাদের বোর্ড নেতৃবৃন্দ এবং কলেজের শিক্ষকগণ অনুধাবন করতে পারেনি যে আমাদের নিজেদের পরিবর্তন ঘটানো উচিত ।এখনো তারা দেদারছে নকল সিস্টেম চালু রেখেছে এবং এই হোমিওপ্যাথি কলেজের কাঠামোগত যে দূর অবস্থা তার কোন উন্নতি এখনো চোখে পড়ছে না।হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল সাইন্স হলেও এই কলেজের নাজুক অবস্থা অধিকাংশ হোমিওপ্যাথি কলেজে কোন মেডিকেল সাইন্স ল্যাব নেই, নেই এনাটমি রুম, প্যাথলজি রুম কম্পিউটার ল্যাব সহ মেডিকেল শিক্ষার যে উপকরণ তা থেকে এই হোমিওপ্যাথিক ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত। কলেজের সাথে হাসপাতাল নামটা যুক্ত থাকলেও অধিকাংশ কলেজের হাসপাতাল কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে এদের নাই কোন প্রচার-প্রসার অধিকাংশ কলেজে রোগীর জন্য কোন বেড নেই।
হোমিওপ্যাথির এই দুরবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন এই অপকর্ম থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যাবস্থা।
লেখক ও গবেষক ডা.আরমান হোসাইন, ঢাকা।