দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে সারাদেশে আজ সোমবার (২৯ জুলাই) ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে স্থান নির্ধারণ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
‘কোটা পুনর্বহাল করা চলবে না’ নামক আন্দোলনকারীদের গ্রুপ থেকে কর্মসূচির স্থান এবং সময় জানাচ্ছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দিবাতগত রাতেই সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর উত্তরায় সড়কে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এছাড়া ঢাকার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতির খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (গতকাল) রাতে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, অন্তত ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় সোমবার (আজ) উত্তরা এলাকায় অবস্থান নিবেন। যার প্রেক্ষিতে সকাল থেকে পুলিশের বহু গাড়ি লক্ষ্য করা যায় উত্তরা এলাকার বিভিন্ন সড়কে।
এদিকে চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে ফেলে বিবৃতি আদায় ও আন্দোলনকারীদের গুম, খুন করা ও মিথ্যা মামলার প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বিকাল ৩টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। দলমত নির্বিশেষে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের আপামর জনতাকে আজকের কর্মসূচি বাস্তবায়নে জন্য আহ্বান জানান তিনি।
অন্যদিকে বাকি সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমনে নিহত শত শত শহীদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকব। প্রিয় দেশবাসী ও ছাত্রসমাজ, বিগত কয়েকদিন যাবৎ গণহত্যা, গণগ্রেফতারের পর সরকার এখন এক নতুন নাটকের সৃষ্টি করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি দিয়ে, ছাত্রসমাজের দাবিগুলোর প্রতি সরকার চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে।
‘শুধু তাই নয়, সারাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত শহীদদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে, আর্মড ফোর্সকে ব্যবহার করে ঢাকায় এনে সরকার তাদের থেকে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়া ও সমস্ত দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে শহীদের রক্তের সঙ্গে তামাশা করেছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে ভাই, জীবনের শেষনিশ্বাস পর্যন্ত ছাত্রসমাজ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারে না।’
বার্তায় আরও বলা হয়, দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পর সরকার সারাদেশে রেইড করে গণগ্রেফতার করেছে। হাজার হাজার মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। জানালার পাশে পড়ার সময় কোমলমতি শিশু সামিরকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি স্কুল ও কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আহত ও শহীদ করা হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা কঠোর ভাষায় বলতে চাই, আমাদের দাবি আদায় না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ছাত্রসমাজের আন্দোলন চলবে।
‘সোমবার সারাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং প্রতিবাদ সমাবেশ। আমাদের দাবি আদায়ের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে বাংলাদেশের সব নাগরিককে অনুরোধ করছি,’ বলা হয় বার্তায়।
আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:৫৪ | বৃহস্পতিবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি