মোঃ সদরুল কাদির (শাওন), সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি::সাতক্ষীরার ইছামতি নদীর সীমান্তে গড়ে ওঠা নয়নাভিরাম বনটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৌন্দর্য্য বেড়েই চলেছে। মাত্র কয়েক বছরেই গড়ে ওঠা বনটি নদী ভাঙন রোধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সাথে সাথে বিনোদনের খোরাক জোগাতে শুরু করেছে।
ভারত-বাংলাদেশ বিভাজনকারী ইছামতি নদীর কুল ঘেষে শিবনগর মৌজার ১নং খতিয়ানের ৩৯৮ নং দাগের ইছামতি নদীর তীরে জেগে ওঠা চরভূমি। যার আয়তন ৩১.৪৬ একর (০৭ একর পুকুরসহ)।
গত ৫/৬ বছর আগে মানুষের চিত্ত বিনোদনের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয় “রূপসী ম্যানগ্রোভ” বিনোদন কেন্দ্র।
সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের হাতে উদ্বোধন হয় “রূপসী ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট”। বিশ্বের অন্যতম দর্শকনন্দিত সুন্দরবন থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এনে ছোট ছোট খাঁচা তৈরী করে গড়ে তোলা হয় বন। রোপন করা হয় হরেক জাতের গাছের চারা, খনন করা হয় একটি বিশাল দিঘী, তৈরী করা হয় একটি রেস্ট হাউজ। সময়ের সাথে সাথে বনের পরিধি ও চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে সর্বস্থরের মানুষের কাছে। এখানে দুর দুরান্ত থেকে সাধারণ মানুষসহ প্রশাসনের উদ্ধতন কর্মকর্তারা আসেন কিছুটা শান্তির পরশ নিতে।
গত কয়েক বছর আগে এখানে আসেন প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার। তিনি জায়গাটিতে এসে মুগ্ধ হন এবং উন্নয়নের সবধরনের আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়া জেলাসহ জেলার উদ্ধতন কর্তৃপক্ষ রূপসী ম্যানগ্রোভের রূপ দেখতে এসে মুগ্ধ হয়।
বনটির শুরুতে ধীর গতিতে উন্নয়ণ হলেও দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ-আল-আসাদ যোগদানের পর থেকে রূপ বদলে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ বনের। বিনোদন কেন্দ্রটিকে আরো নান্দনিক ও নয়নাভিরাম করে একটি সৌন্দর্যপূর্নভাবে মানুষের চিত্ত বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ট্রেইল নির্মাণ, দিঘীতে প্যাডেল বোর্ড দেয়া, পাকা বেঞ্চ নির্মাণ, বিভিন্ন কৃত্রিম পশুপাখি ও ছোটদের জন্য শিশুপার্ক।
এছাড়া উপজেলা সদর থেকে রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যন্ত পিচের রাস্তা নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজের বরাদ্ধ হলেও টেন্ডার নিচ্ছেন না কোন ঠিকাদার। শীতের মৌসুমে আবার বনটিতে প্রতিদিনই পিকনিক হলেও নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় বনের পরিবেশ অনেকটা নষ্ট হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ঘুরতে আসা অনেকেই।
ম্যানগ্রোভ রূপসী বনে ঘুরতে এসে দর্শাণার্থী মুশফিকুর রহমান রিজভি, রুনা পারভীন, রেহেনা পারভীনসহ কয়েকজন জানান, ইছামতির তীরে গড়ে তোলা রূপসী বনটি নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশ হওয়ায় সকলের মনে এটি স্থান করে নিয়েছে। এখানে ঘুরতে আসলে প্রাকৃতির রূপ উপভোগ করা যায়। সুন্দরবনের আদলে বনটি গড়ে ওঠায় দিনে দিনে চাহিদা বাড়ছে।
তবে, বনের এলাকা জুড়ে রান্নার অবশিষ্টাংশ ও ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। একই সাথে উচ্চ স্বরে বাদ্যবাজনা বাজানো হয়। একটি সময় প্রাকৃতির ভারসম্যরক্ষাকারী পাখিরা স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হবে বলেও অভিযোগ তাদের মত অনেকেরেই। তাছাড়া ময়লা ফেলার কোন স্থান না থাকাতে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ-আল আসাদ-জানান, দেবহাটা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বন সাতক্ষীরা জেলার বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন শিল্প হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
এখানে সুন্দরবনের আদলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি নজর কেড়েছে দর্শানার্থীদের। দুরদুরন্ত থেকে আসা পর্যটকরা এসে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর সৌন্দর্য এবং রুপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ বনের অপরুপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন।
ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি আরও আকর্ষনীয় করা হলে সরকারি রাজস্ব আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দেবহাটা উপজেলা তথা সাতক্ষীরা জেলার সুনাম বয়ে আনবে। এজন্য একটি কটেজ নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে। সাথে সাথে যোগাযোগের রাস্তা নির্মান সহ নানামূখি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে এবং পাশাপাশি পিকনিক করতে আসা দর্শনার্থীদের রান্না ও খাওয়ার জন্য আলাদা ঘর তৈরীর কাজ চলমান রয়েছে।