হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অসুস্থতার সুযোগে ধর্মভিত্তিক সংগঠনটির নেতৃত্ব কবজায় নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী। হেফাজতের আমীর পদে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী অথবা তার মামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে বসাতে চাচ্ছে জামায়াত। অভিযোগ আছে, হেফাজতের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ তৈরী করতে জামায়াতে ইসলাম সহ কয়েকটি সরকার বিরোধি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।
জানা যায়, হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে নিতে বছরখানেক আগে থেকে নানা পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হচ্ছিল জামায়াত। পরিকল্পনা অনুযায়ী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম বা হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদেও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে বসাতে চায় তারা। কারণ এই মাদ্রাসার প্রধান হওয়া মানেই হেফাজতের সবকিছু নিয়ন্ত্রণের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পাওয়া।
বিরোধের অংশ হিসাবে সর্বশেষ শনিবার (১৬ মে) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাটহাজারী ওলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিএনপি নেতা মীর মুহাম্মদ নাছির উদ্দিনের চাচাতো ভাই মীর ইদ্রিস, মাওলানা জাফর, মাওলানা সাইফুল্লাহ, মাও নাসির উদ্দিন মুনির, মাও ইমরান সিকদার সহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম বা হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে আল্লামা শফিকে সরিয়ে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে সাতকানিয়ায় একটি বাড়িতে সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী ও সরকারবিরোধী উগ্র বক্তা হিসেবে পরিচিত তারেক মনোয়ারের সাথে হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর গোপন বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে গত ২ ফেব্রুয়ারি গোপন প্রতিবেদন দেয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী অসুস্থ থাকায় জুনায়েদ বাবুনগরী নানা ধরনের কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর এমন কর্মকান্ডে ক্ষুব্দ হয়েছেন হেফাজতের আমির ও আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহম্মদ শফি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ধারণা করছেন তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক নিয়োগ না দিয়ে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তার এ ধারণা থেকে তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মিটিং করছেন। পাশাপাশি তিনি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় হাটহাজারী ওলামা পরিষদের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং মাদ্রাসায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমেদ শফি বেঁচে আছেন এবং সুস্থ আছেন। এমন অবস্থায় মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী বহিরাগত ওলামা পরিষদের জামায়াত-বিএনপি’র সদস্যদের নিয়ে শনিবার দিনভর যা করেছেন তা মাদ্রাসার আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার বহির্ভূত।
শফি পন্থী হেফাজতের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বাবুনগরী জামায়াতের নির্দেশনায় হেফাজতের মধ্যে অভ্যন্তরীন বিরোধ তৈরি করছে।