দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম “জব্দের আগেই অ্যাকাউন্ট খালি করেন বেনজীর” এর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে দুর্নীতি দমক কমিশনের (দুদক) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৩শে মে আদালত বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দিলেও আগেই টাকা সরিয়ে ফেলেন তিনি। আর এসব অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ টাকা ছিল, তা জানা যায়নি।
ব্যাংক অ্যাকাউন্টের থেকে টাকা সরানোর মতো করে জমি, ফ্ল্যাট বা অন্য কোনও সম্পত্তিও হস্তান্তর করেছে কি না, সেরকম কোনও তথ্যও পাওয়া যায়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তাকে ও তার পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে। গত মঙ্গলবার (২৮ মে) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তলবের চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে আগামী ৬ জুন তাঁদের দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। তাঁদের দুই মেয়ে হলেন ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর। তবে আরেক মেয়ে জাহরা জেরিন বিনতে বেনজীর নাবালিকা হওয়ায় তাকে তলব করা হয়নি।এরই মধ্যে আদালতের আদেশে বেনজীর পরিবারের মালিকানাধীন রাজধানীর গুলশানে বিশালাকৃতির বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জে ৩৪৫ বিঘা ও মাদারীপুরে ২৭৩ বিঘা জমি জব্দ এবং অসংখ্য ব্যাংক ও বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করেছে দুদক। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে বিপুল সম্পদ গড়েছেন বেনজীর, তার বেশির ভাগই তিনি কেনেন আইজিপি পদে আধিষ্ঠিত হওয়ার পর। তিনি আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, চাকরিজীবনের শেষ দুই বছরে অর্থাৎ আইজিপি থাকাকালেই পরিবারের সদস্যদের নামে ৪৬৬ বিঘা জমি কেনেন বেনজীর। ১৯টি প্রতিষ্ঠানে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তাঁর পরিবার হয়ে যায় পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী পরিবার।
এদিকে সবার মনে প্রশ্ন উঠছে সেই বেনজীর আহমেদ আসলে কোথায়? গত কয়েকদিন ধরে তার কোনো খোঁজও মিলছে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, পরিবারসহ বেনজীর আহমেদ এখন দুবাইতে অবস্থান করছেন।
গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্লাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
দুদক সূত্র জানায়, আদালতের আদেশের পর সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিস ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে যেন সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর ও ব্যাংক থেকে যেন অর্থ উত্তোলন করতে না পারেন সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অফিসে আদালতের আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে। এই পর্যায়ে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের নামীয় সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর করতে গেলে সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো রেকর্ডভিত্তিক সম্পদ যাচাই করে আদালতের আদেশ পরিপালন করবে। তাতে জব্দ ও অবরুদ্ধ সম্পদ বেহাত হওয়ার কোনো ধরনের সুযোগ থাকবে না।
জানা গেছে, সিটিজেন টিভি নামে একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলে বেনজীর আহমেদের দুই মেয়ের মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে। সিটিজেন টিভির পরিচালক তাঁর বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর। ২০১৭ সালে এই টিভি চ্যানেল অনুমোদনের সময় তারা দু’জনই শিক্ষার্থী ছিলেন। বেনজীর পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ তথ্য জানতে পেরেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ তথ্য ইতোমধ্যে দুদকে পাঠানো হয়েছে। এদিকে সরকারি অনুমোদন পেয়েও এখনও সম্প্রচারে আসেনি সিটিজেন টিভি। তবে টেলিভিশন চ্যানেলটির নামে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকে ২০২১ সালে একটি শর্ট নোটিশ ডিপোজিট (এসএনডি) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, যা বর্তমানে সক্রিয়। অ্যাকাউন্ট খোলার ফরমে বেনজীরের দুই মেয়ের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে– ২২৮/৩, শেখপাড়া রোড, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী।
উল্লেখ্য, দুদক গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে।
আজ ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ১২:২০ | রবিবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি