হিজাব, মাথার চুল ও চেহারাকে পুরুষদের নজর থেকে এড়াতে এই বস্ত্রটি পরিধান করে নারীরা। এটা মূলত মুসলিম নারীদের জন্য একটি পর্দা প্রথা যা পুরুষের কাছ থেকে তাদের অনেকখানি আড়াল করে রাখে। শালীনতাবোধ, গোপনতা এবং নৈতিকতার প্রতীক হিসেবেই মুসলিম নারীরা হিজাব পরিহিত হন। তবে বর্তমান সময়ে হিজাবকে অনেকেই ধর্মীয় পোশাক মানতে নারাজ। একে শুধুই নিজস্ব ফ্যাশনের একটি অংশ মনে করে থাকেন তারা। নিজেকে অভিজাতভাবে ফুটিয়ে তুলতে তাদেরকে হিজাব ব্যবহার করতে দেখা যায়। পর্দা করার সঙ্গে নিজেকে মার্জিতভাবে উপস্থাপন করতেও হিজাব বেশ উপকারী।
বর্তমান ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে হিজাব শুধু আর পর্দাতেই সীমাবদ্ধ নেই। হিজাব হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন ফ্যাশন জগতের এক বিশেষ পরিচিত নাম! পর্দা করার উদ্দেশ্যে তো বটেই, এখন ফ্যাশন করার জন্যও নারীরা হিজাব ব্যবহার করছেন হরহামেশা।
হিজাবের জনপ্রিয়তা মুসলিম নারীদের পাশাপাশি অমুসলিম নারীদের মধ্যে এমনকি পশ্চিমা বিশ্বেও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে বাঙালি নারীরা শাড়ির সঙ্গেও কিন্তু হিজাব ব্যবহারের চল বাড়াচ্ছেন।
তবে হিজাব বা শাড়ি পরার সময় মুখে পিন রেখে ব্যবহার করেন অনেকেই। যা অসাবধানতার কারণে শ্বাসনালীতে আটকে গেলে হতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। হিজাব কিংবা শাড়ির পিন শ্বাসনালীতে আটকে গেলে তা জীবনের বিরাট বড় ঝুঁকিও বয়ে আনতে পারে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নুরুল হুদা নাইম জানিয়েছেন এমন তথ্য। গেল বছর সিলেটের জকিগঞ্জে সুমনা নামে এক নারীর গলায় হিজাব পিন আটকে যায়। এরপর চিকিৎসক কোনও অপারেশন ছাড়াই এই পিন বের করে আনেন। তিনি বলেন, এক্সরের মাধ্যমে পিনটির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর ব্রংকোসকপির মাধ্যমে সেটি অপসারণ করেছি আমরা।
এমন ঘটনা এটি প্রথম নয়। বছর খানেক আগে এক মেকানিকের মুখে গাড়ির পিন নিয়ে কাজ করার সময় ছোট্ট একটি পিন শ্বাসনালীতে আটকে যায়। এ ধরনের ঘটনা ইদানীং অনেক বেশি দেখা যায় বলে জানিয়েছেন ডা. নাইম। আর তারপরেই সচেতনতার অংশ হিসেবে এই সতর্কতা দিয়েছেন তিনি।
বিউটিশিয়ান আখি বাতরা বলেন, কাস্টমারদের শাড়ি কিংবা অন্য পোশাক পরাতে গেলে একটি পিন হাতে নিই, আরেকটি মুখে রাখি। তবে এ পর্যন্ত কখনো শ্বাসনালীতে পিন আটকে যায়নি। আগে জানতাম না যে পিনের জন্য এতো বড় বিপদ হতে পারে। ভবিষ্যতে সাবধান হবো।
২০০৮ সাল থেকে হিজাব পরেন তানজিম মুনিয়াত। তিনি জানান, হিজাব আটকাতে মুখে কখনও পিন রাখেন না তিনি। অনেকে সেফটি পিন, টেইলারিং পিন কিংবা ববি পিন মুখে নিয়ে তারপর ব্যবহার করেন। তবে আমার একটু সূচিবায়ুর মতো আছে বলে আমি এগুলো মুখে দিতে পারি না। আমি ড্রেসিংয়ের জায়গায় ছোট হাত বালিশ কিংবা তুলার বল রেখে দেই। যাতে পিনগুলো গেঁথে রাখি। আগে ডিস্ক বা কোনো একটা বাক্সে রেখে দিতাম। কিন্তু সেটা বের করতে গেলে খোঁচা লাগতো। তবে এখন থেকে এসব পিন ব্যবহারে আরো বেশি সতর্ক হবেন এবং অন্যদেরও সতর্ক করবেন বলে জানান তিনি।
গলায় শ্বাসনালীতে পিন আটকে যাওয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন ডা. নুরুল হুদা নাইম। তিনি বলেন, হঠাৎ গলায় কিছু আটকে গেলে আমরা শ্বাসনালীতে যেনো সরাসরি পিনটি চলে যায় সেজন্য ঢোক গেলানোর চেষ্টা করি। কিন্তু মুখ বন্ধ করে ঢোক গিলতে গেলে একটু সময় লাগে। আর এই সময়টাতেই ওই বস্তুটি শ্বাসনালীতে চলে যায়।
শ্বাসনালীতে পিন আটকে যাওয়া কতটা ক্ষতিকর হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিনের কারণে শ্বাসনালীর যে অংশ আটকে যেতো সে অংশটি ফুলে যায়। একটা সময় সেখানে সংক্রমণ দেখা দেয়। ফলে বাতাস আর পৌঁছায় না। প্রদাহ অনেক বেড়ে যায়। এমনকি ওই অংশটা ফোঁড়ার মতো হয়ে যেতে পারে।
আমাদের দেশের অনেকে বেশিরভাগ সময়ে নারীরা সাজগোজ করার সময় মুখে পিন রেখে তারপর সেগুলো ব্যবহার করেন। হঠাৎ করেই যদি এটি মুখ থেকে গলায় চলে যায় তাহলে মারাত্মক বিপত্তি ঘটতে পারে বলে জানান তিনি। মুখে হিজাব বা শাড়ির পিন আটকানোর মতো বদভ্যাসটা জীবনের জন্য একটা বড় ক্ষতির সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে। কোনোভাবেই মুখে যা কিছুই হোক, হিজাব কিংবা শাড়ির পিন মুখে আটকে কোনও কাজ না করাই উচিত না।
হিজাব পিন ব্যবহারে সতর্কতা
১। হিজাব পরার আগে অবশ্যই চুল বেঁধে নেবেন। চাইলে একটু টাইট খোঁপা করে নিতে পারেন এতে বাতাস চলাচলের সুযোগ পাবে।
২। যারা নতুন হিজাব করা শুরু করেছেন, প্রথমেই পরিপাটি করে হিজাব পরতে না পারলে চেষ্টা করুন। বাড়িতে বিভিন্ন ভাবে অনুশীলন করুন। দেখবেন আপনি নিজেই নতুন সব স্টাইল করতে পারছেন।
৩। বাইরে যাবার সময় ঝটপট হিজাব পরতে হাতের কাছে বিভিন্ন সাইজের সেফটিপিন, হিজাব পিন রাখুন।
৪। যারা নতুন পড়া শুরু করেছেন, হয়তবা প্রথম প্রথম বেশ গরম লাগতে পারে। এতে অধৈর্য্য হবেন না। সময়ের সাথে সাথে গরম লাগা ভাবটিও কমে যাবে।
৫। ছোট চুলগুলোকে সামলাতে হিজাবের নিচে আন্ডার ক্যাপ ব্যবহার করুন। এতে বেশি গরম মনে হলে নিজেই পছন্দমতো সুতির কাপড় কিনে বানিয়ে নিতে পারেন। খুব বেশি পাতলা জর্জেট বা সার্টিনের কাপড় ব্যবহার করবেন না।
হিজাব একজন নারীকে আরও সুন্দর করে তোলে। বর্তমান যুগের ফ্যাশন হচ্ছে হিজাব। বাইরের ধুলাবালি থেকে ত্বক ও চুলের সুরক্ষা দিতে এর তুলনা হয় না। হিজাব পরলে চুল ঠিক করার ঝামেলা থাকে না। যেকোনো পোশাকে সুন্দর করে হিজাব পরলে অল্পতে জমকালো সাজ হয়ে যায়।
ড. নুরুল হুদা নাইম
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সুত্র : আর টি ভি