দেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫০ মিনিটে আগুন লাগে। ৬ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট। তবে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সচিবালয়ে অফিসের নথিপত্র, কম্পিউটার, আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। অগ্নিকাণ্ডের পর পুরো সচিবালয় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করলেও ভেতরে কোনো দাফতরিক কাজকর্ম হচ্ছে না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল সংবাদ সম্মেলন বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে তাদের ২০টি ইউনিট ও ২১১ জন ফায়ার কর্মী কাজ করেছেন। তবে জায়গার সংকটের কারণে ১০টি ইউনিট সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পেরেছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম তলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া বেশির ভাগ তলাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। আর আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগলেও এখানে পানির কোনো সংকট ছিল না। পাশেই ওসমানি মিলনায়তন থেকে পানি পেয়েছি। ওয়াসার গাড়ি এসে পানি দিয়ে গেছে। কিন্তু সচিবালয়ের কক্ষগুলো আবদ্ধ ও গ্লাস লাগানো থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে।
তিনি আরও জানান, ফায়ার সার্ভিস কর্মী নয়ন পানির পাইপ পাম্পে সংযোগ দেওয়ার জন্য কাঁধে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি দ্রুতগামী ট্রাক পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।এছাড়া, আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিস কর্মী হাবিবুর রহমান পা কেটে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। আগুনে মূলত ছয়, সাত ও আটতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সচিবালয়ে সাত নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনাটি ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, কিংবা এর পেছনে নাশকতা আছে কিনা; সেটা তদন্তের আগে বলা যাবে না। এ ঘটনা তদন্তের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমাদেরকে ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না। এই মুহূর্তে আছি নীলফামারিতে, যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা ব্যাক করছি।’
নৌবাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার(পিও) আমিনুল ইসলাম বলেছেন, সচিবালয়ে লাগা আগুন পরিকল্পিত হতে পারে। কারণ আগুনটা লেগেছে ছয় তলা, নয় তলার পাশাপাশি মাঝেও। এভাবে বিভিন্ন স্থানে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন কখনো লাগে না। এটা পরিকল্পনা মাফিক হতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সচিবালয়ে ঢোকার মোট ফটক পাঁচটি। তবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার ফটক আছে মাত্র দুটি। এই দুই ফটক দিয়েও ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। আগুন ছড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ হলো, মন্ত্রণালয়গুলো কাঠ দিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছে। এটি যখন করা হয়, তখন নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু কাঠ দিয়েই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি রুম ছিল বন্ধ। তালা ভেঙে, জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। তাই অভিযান পরিচালনা করতে তাদের বেশ সমস্যা হয়েছে। যে কারণে আগুন নেভাতে সময় লেগেছে।
আজ ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | শীতকাল | ২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৮:৫৩ | শনিবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি