দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শীঘ্রই। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত তালিকায় রয়েছেন নীলফামারীর আশিকা সুলতানা। মনোনয়ন ফরমে তিনি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ তথ্যটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক মহল। এতে নীলফামারী জেলার রাজনীতিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে।
এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক মহলদের ভাষ্য, আশিকা দলে অবদানের জন্য নয়, বরং তার পিতা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামীয় লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আজহারুল ইসলামের অবদানের জন্যেই নারী সংরক্ষিত আসনে মনোনীত হয়েছেন।
জানা গেছে, সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নের আশায় আওয়ামী লীগের ফরম কেনেন আশিকা। মনোনয়নপত্রে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার জায়গায় লেখেন, তিনি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় যে তালিকা তৈরি করে দেওয়া হয় সেই তালিকার ৯ নম্বরে ছিল তার নাম, আর পরিচয়ের জায়গায় লেখা ছিল-সাবেক সাধারণ সম্পাদক কিশোরগঞ্জ উপেজলা মহিলা আওয়ামী লীগ। তার ফরম নম্বর ছিল ২৪২।
এ প্রসঙ্গে আশিকা সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গনমাধ্যমকে বলেন, আমার পদের প্রয়োজন নেই, বাবার পরিচয়ই আমার পরিচয়। আমার বাবার অবদানের জন্যই আমাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অনেকে অনেক বড় পদ নিয়েও মনোনয়ন পায়নি। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দলের ত্যাগী নেতাদের স্ত্রী-মেয়েদের মনোনয়ন দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মনোনয়ন পেয়েছি। ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, পরিবারের অনেকেই রাজনীতিতে আছেন। কবে, কোথায় কোন দায়িত্ব পালন করেছি তার তো কোনো প্রমাণ আমার কাছে নেই।
আরো জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে কিশোরগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের দুটি কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রথম কমিটির সভাপতি ছিলেন আশিকার মা হালিমা ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন রাবেয়া বেগম। পরে শিল্পী রানী রায় সভাপতি ও রুমানা ফেরদৌস সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মায়ের সঙ্গে কমিটির সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন-আশিকার এমন দাবি সঠিক নয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলাও তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। শিলা বলেন, সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত আটজন নারীনেত্রী সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। আশিকার বিষয়টি নিশ্চিত নয়।কিশোরগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিল্পী রানী রায় বলেন, আশিকা বাবার অবদানের কারণেই মনোনীত হয়েছেন। তিনি দলের যে পরিচয় ব্যবহার করেছেন, তা সঠিক নয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত তালিকায় নারী সংরক্ষিত আসনে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাদের প্রত্যেকের নিজেদের দলের জন্য অবদান রয়েছে নতুবা তাদের পিতা-মাতা দলের দুর্দিনে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রতিবাদ করতে গিয়ে, দুঃসময়ে দলের জন্য কাজ করেছেন-১এমন কাউকেই বেছে নেয়া হয়।
দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, আশিকার বাবা আজহারুল ইসলাম ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, আশিকাকে বাবার অবদানের কারণেই সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দেশ ও দলের জন্য তার বাবার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। তার ভুল তথ্য দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই।
উল্লেখ্য, গত বুধবার আওয়ামী লীগ একাদশ সংসদের ৭ নারী এমপিকে বহাল রেখে নতুন ৪৮ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে। এর আগে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন পেতে ১ হাজার ৫৫৩ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনেন। সংসদে দলীয় এমপির সংখ্যাগত হিসাব অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাগে পড়ে ৪৮টি। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি)। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি। আপিল দায়ের ২২ ফেব্রুয়ারি এবং আপিল নিষ্পত্তি হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ ফেব্রুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ভোট গ্রহণ হবে ১৪ মার্চ। এখন পর্যন্ত নারী আসনে কখনো ভোট অনুষ্ঠিত না হওয়ায় প্রার্থী তালিকা বৈধ হলে এসব নারী নেত্রীই এমপি হতে যাচ্ছেন।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১০:০৭ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি