ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য এবং এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া ঠেকাতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করার চিন্তা করছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
এক ব্যক্তি কত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করার পাশাপাশি একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয়-প্রধানের পদে থাকা বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার পক্ষে কমিশনে মত এসেছে। এ ছাড়া সংবিধান পুনর্লিখনের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য না আসায় সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবছে কমিশন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সূত্রে এসব জানা গেছে।
কমিশনের সূত্র বলছে, একটি দল যাতে এককক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মানুষের অধিকার ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন করতে না পারে; কিংবা সংবিধান সংশোধন করতে না পারে, সে বিবেচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে শুধু এক ব্যক্তির, এক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এমন পরিস্থিতি আর না হয়।
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদে নেতিবাচক দিক রয়েছে বলে মনে করে সংস্কার কমিশন। সে ক্ষেত্রে কমিশন জার্মানি, ইসরায়েল, নেপালসহ যেসব দেশে সংখ্যানুপাতিকে এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদ রয়েছে, সেসব দেশের ভোটের রাজনীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে। কমিশনের সূত্র বলেছে, এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের কিছু নেতিবাচক দিক বিবেচনায় নিয়ে কমিশন সুপারিশ তৈরি করবে।
সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাব করার কথাও ভাবছে। এ জন্য কমিশন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করতে পারে বলে জানা গেছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজকে প্রধান করে গত ৭ অক্টোবর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশন সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে দেশের বিশিষ্টজন, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় না করলেও লিখিত প্রস্তাব গ্রহণ করে কমিশন।
এ ছাড়া সংবিধানের বিষয়ে ওয়েবসাইটে মতামতও নেওয়া হয়। এতে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বিভিন্ন প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে সংবিধানের বিষয়ে জরিপ করা হয়। এরপর কমিশন বাংলাদেশের সংবিধান ছাড়াও ১২০টি দেশের সংবিধান নিয়ে পর্যালোচনা করে। এসব মতামত, প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির কাজ করছে সংস্কার কমিশন। সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা আগামী ৬ জানুয়ারির মধ্যে এই কমিশনের প্রস্তাব পেশ করার কথা।
একাধিক সূত্র বলেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংবিধান পুনর্লিখনের বিষয়টি আলোচনায় এলেও রাজনৈতিক ঐকমত্য না আসায় সংবিধান সংস্কার কমিশন পুনর্লিখনের পরিবর্তে বিদ্যমান সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবছে। কমিশন বাংলাদেশসহ ১২১টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করছে।
সংস্কার কমিশনের সূত্র বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর পদে একই ব্যক্তি একাধিকক্রমে দুবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না—এমন প্রস্তাব বেশির ভাগ অংশীজন ও ওয়েবসাইটের মতামতে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করার বিষয়ে কমিশনের মধ্যেও ঐকমত্য হয়েছে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম