মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ ও ময়লার ভাগাড় অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দি বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। পরে সরকারি কলেজের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে চৌমুহনী চত্বরে এসে অবস্থান নেয়। ও বিভিন্ন স্লোগান সহ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। পরে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্রশাসক এডিসি মোছাম্মৎ শাহিনা আক্তারের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে কলেজ শিক্ষার্থী উম্মে নাফিসা মাইমুনাহ বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করা হোক। আর আমাদের দাবি যদি বাস্তবায়ন বা পূরণ না করা হয়, তাহলে অবস্থা কিন্তু বেশী ভালো হবে না। আমাদেরকে বছরের পর বছর অনেক আশা দিয়ে রাখা হয়েছে কেউ কথা রাখেনি। আমরা চাই, দ্রুত এই ময়লার ভাগাড় অপসারণ করা হোক। আমরা আর এই ময়লার ভাগাড়ে থাকতে চাই না। ময়লার ভাগাড়ের সামনে দিয়েও আর আসতে চাই না।’
দি বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান চৌধুরী বলেন, ‘বিগত ১৩ বছর ধরে এই কলেজে পড়াশোনা করছি। কিন্তু আমার ছোট ভাই একদিন আসলে দু’দিন আসতে চায় না। কারণ হচ্ছে, সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় ওর ফুড পয়জনিং হয়ে যায়। ক্লাসের মধ্যে হঠাৎ বাতাসে দুর্গন্ধ আসলে আমরা ক্লাস ঠিক ভাবে করতে পারি না। দিন দিন শিক্ষার্থীদের কলেজে আসা কমে যাচ্ছে, একমাত্র এই ময়লার ভাগাড়ের জন্য। আমাদের দাবি, এই ময়লার ভাগাড়টা যেনো দ্রুত এখান থেকে সরানো হয়।’
একাধিক শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘আমাদের দাবি একটাই ময়লার ভাগাড় অপসারণ করতে হবে। ময়লার দুর্গন্ধের জন্য শারীরিক ভাবে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমাদের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ একটি প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ, কিন্তু এখন শুধু ময়লার ভাগাড় দেখতে পাই। বহু শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে চায় না। এই ময়লার স্তূপ দ্রুত অপসারণ করা প্রয়োজন। শ্রীমঙ্গলের মতো শহরে একটি অমঙ্গল কাজ করা হচ্ছে। তারই একটা প্রমাণ হচ্ছে স্কুল কলেজের সামনে একটি ময়লার ভাগাড়। আমরা আমাদের দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ড. মো. ইউনুসের কাছে অনুরোধ ও জোর দাবি জানাই। যাতে তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিকৃত এই ময়লার ভাগাড় অপসারণ করে আমাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দেবেন।’
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্রশাসক এডিসি মোছাম্মৎ শাহিনা আক্তার বলেন, ‘তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দীর্ঘদিন যাবৎ ময়লার ভাগাড় রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীসহ যারা আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন তারা দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এটি অপসারণের জন্য একটি পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে পৌরসভা থেকে, আমি যতটুকু জেনেছি। একটি জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, সেটি দখল হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পৌরসভা কাজটি সমাপ্ত করতে পারেনি। আমি এখানে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থী যারা এসেছেন, সকলের বক্তব্য শুনেছি। অবশ্যই এটি একটি যৌক্তিক দাবি। এবং দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার উচিত বলে আমিও মনে করি। এটি যুক্তিসঙ্গত একটি দাবি।’
তিনি বলেন, ‘আগে নানা কারণে করা হয়নি, এখন আমরা এটি করতে চাই এবং আমার যে আবেদন থাকবে এলাকাবাসীর প্রতি- ময়লার ভাগাড়টি সরিয়ে যেখানে নেওয়া হবে বা দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সেখানে সরানোর জন্য যাতে আমরা এলাকাবাসীর পূর্ণ সহযোগিতা পাই।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ময়লার ভাগাড়টি স্থানান্তরের জন্য ২০১৭ সালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের জেটি রোডস্থ এলাকায় এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা দিয়ে নতুন জমি ভাগাড়ের জন্য ২.৪৩ একর জমি ক্রয় করা হয়েছিল। সে সময় জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় ওই এলাকার ফয়েজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি আদালতে মামলা করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে আদালত ২০২৩ সালের ১৩ মে পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু মামলা দায়ের করা ব্যক্তি তিনি মারা গিয়েছেন বলে জানা যায়।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১০:৫৫ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি