মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচেন আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বেসরকারিভাবে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ৭ জানুয়ারি রবিবার রাত সাড়ে আটটায় সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুনের স্বাক্ষরিত ঘোষনাতকৃত বেসরকারি ফলাফলে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
তাঁর এবিজয়ের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ ২২ বছর পর কুলাউড়ায় আওয়ামীলীগ পেল দলীয় এমপি। নাদেলের প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে বাজিমাত করলেন। নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফল প্রকাশের সাথে সাথে কুলাউড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নাদেল অনুসারীরা অভিনন্দন জানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন নেতাকর্মীরা।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও কুলাউড়ায় আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য না থাকায় কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। এখন শফিউল আলম নাদেল এমপি নির্বাচিত হওয়ায় উন্নয়ন বঞ্চিত কুলাউড়ার মানুষের দুঃখ ঘোচাবে বলে মনে করছেন অনেকে।
এ আসনে মোট ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। নির্বাচনে ১০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে বৈধ ভোটের সংখ্যা হলো ১ লাখ ১ হাজার ৭৬৪। বাতিল ভোটের সংখ্যা হলো ১ হাজার ৭৭০। মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ৫৩৪। নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭১৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) একেএম সফি আহমদ সলমান পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫৫২ ভোট। আর তৃণমূল বিএনপির (সোনালী আঁশ) প্রতীকের প্রার্থী এম এম শাহীন পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৪৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি মো: আব্দুল মতিন পেয়েছেন ৬৪৮ ভোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এনামুল হক মাহতাব পেয়েছেন ৩০৫ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আছলাম হোসাইন রহমানী পেয়েছেন ৩৬৬ ভোট, জাতীয় পার্টির আব্দুল মালিক পেয়েছেন ৫৬৫ ভোট, বিকল্পধারার কামরুজ্জামান সিমু পেয়েছেন ১৬১ ভোট। যদিও ফলাফল ঘোষণার আগেই বিকেলে ভোট বর্জন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সফি আহমদ সলমান ও তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এম শাহীন।
১৩টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭২ এ এলাকা জুড়ে কুলাউড়া আসন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৫ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ জন।
উল্লেখ্য, কুলাউড়া আসনে ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির নওয়াব আলী আব্বাছ খাঁন এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত ষষ্ট জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সাবেক নেতা এম এম শাহীন ধানের শীষ নিয়ে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। সকল দলের অংশগ্রহণে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির এম এম শাহীন ও জাতীয় পার্টি নওয়াব আলী আব্বাছ খাঁনকে পরাজিত করে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর। এরপর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সুলতান মনসুরকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন এম এম শাহীন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এম শাহীন ও নৌকার প্রার্থী আতাউর রহমান শামীমকে পরাজিত করে তৃতীয় বারের মত এমপি হয়ে মহাজোট থেকে চমক দেখান জাতীয় পার্টির প্রার্থী নওয়াব আলী আব্বাছ খাঁন। বিএনপি বিহীন ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুহিবুল কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মতিন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে পুনরায় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে মহাজোটের শরিক বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগদান করে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন এম এম শাহীন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের (গণফোরাম) প্রার্থী সুলতান মনসুর ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী হন। কিন্তু সরকারের প্রতিকূলে থাকায় গত ৫ বছর এমপি থাকাকালীন সময়েও এলাকায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। তিনি যেমন সংসদীয় এলাকায় আসেননি, তেমনি মানুষের খোঁজখবরও নেননি। ফলে মানুষ তার ওপর হতাশা ও ক্ষুব্ধ ছিল। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এমপি নির্বাচিত হওয়ার কারণে কুলাউড়ায় দৃশ্যমান উন্নয়ন হবে বলে আশা করছেন সাধারণ নাগরিকরা।
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ছাত্রলীগের রাজনীতি করে ধীরে ধীরে ওঠে এসেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। ১৯৮৬ সালে তিনি সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হন। পরবর্তীতে সিলেট সরকারি কলেজ এবং এমসি কলেজে পড়াকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন তিনি। পরে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন। ১৯৯৩ সালে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৯৭ সালে হন সভাপতি। এরপর সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগে শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হন নাদেল। ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের পর তিনি সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কৌলায়।
আওয়ামীলীগের প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কুলাউড়ার মানুষ ভোট প্রদান করেছে তাদের পছন্দের প্রতীকে। এজন্য সকল সম্মানিত ভোটার ও কুলাউড়াবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কুলাউড়ার উন্নয়নের নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে কাজ করবো। তিনি বলেন, দেশের অনেক উপজেলায় যে উন্নয়ন হয়েছে সেইরকম উন্নয়ন কুলাউড়ায় হয়নি দলীয় সাংসদ না থাকায়। আমি সমাজের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য সুযোগ বৃদ্ধি, মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর প্রদক্ষেপ গ্রহণ, প্রত্যেকটি ইউনিয়নে খেলার মাঠ তৈরি, জলাবদ্ধতা-যানজট নিরসন, এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবো। তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নৌকা কুলাউড়াবাসীর জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি বিশেষ উপহার। নৌকাকে বিজয়ী করতে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ ছিল। উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করতে তারা নিরলস কাজ করেছেন। কুলাউড়ার মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:২৭ | বৃহস্পতিবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি