ঈশাত জামান মুন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ৮/১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রোববার (২৮ জুন) দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) মধ্যরাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫/২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তার বাম তীরের লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৮/১০ হাজার পরিবার টানা চার দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে ও উজানের পাহাড়ি ঢলের কারনে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিকে টানা ২৪ ঘণ্টা বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তা নদীর পানি। ফলে নিম্নাঞ্চলে বন্যার সৃস্টি হয়। যা কমে গিয়ে বন্যার উন্নতি ঘটে। আবার বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজ রক্ষার্থে সব জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। যা চার দিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। ফলে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার, তুুুষভান্ডার, ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৮/১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
টানা চার দিন পানিবন্দি পরিবারগুলোর কেউ কেউ পাশের নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে আবার কেউ রাস্তা বা বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ ঘরে খাট চৌকি দিয়ে মাচাং বানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চরম বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী আর শিশুরা। তিস্তা চরাঞ্চলের প্রতিটি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এসব চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন গৃহপালিত পশু-পাখি। এসব গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকরা। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ।
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বলেন, পানিবন্দি ৮ হাজার পরিবারের জন্য ৬৮.৬৬ মেট্রিকটন জিআর চাল এবং ৬ লাখ ২৬ হাজার ২শ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৪১ পরিবারকে জনপ্রতি ২০ কেজি করে চাল ও ঘর মেরামত বাবদ নগদ ৭ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত থেকে বাড়তে থাকে। শুক্রবার (২৭ জুন)শনিবার সকাল ৬ টায় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেই থেকে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। রোববার (২৮ জুন) দিনভর বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। ব্যারেজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।