ঈশাত জামান মুন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লালমনিরহাটের দায়িত্ব প্রাপ্ত পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব মেসবাহুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সাথে মতবিনিময় করেন।
সভার শুরুতে লালমনিরহাট জেলা জজশীপের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালের বিচারক জেলা জজ ফেরদৌস আহমেদ এর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ, শোক সন্তোপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
সচিব মেসবাহুল ইসলাম লালমনিরহাটে স্বচ্ছভাবে ত্রাণ বিতরন ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি কর্মকর্তাদের ভুমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, জেলায় করোনা টেষ্টের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং দ্রুত ফলাফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে জেলা হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপনে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর ত্রান কার্যক্রম ও করোনা বিষয়ে সার্বিক তথ্য উপস্থাপন কালে বলেন, জেলায় মোট ৮৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তম্মধ্যে ৫১ জন সুস্থ হয়েছে এবং ১ জন মৃত্যু বরন করেছে।
জেলায় করোনা সন্দেহে ১ হাজার ৭শত ৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরিক্ষার জন্য প্রেরন করা হয়েছে তম্মধে ১ হাজার ৩শত ৯১টি ফলাফল পাওয়া গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়া ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫১১টি পরিবারের মাঝে ১ হাজার ৫শ ৮৭ মে: টন জি.আর চাল এবং নগদ ৭৬ লাখ ৪৯ হজার ৪৪৫ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, জেলায় করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু না জানার পূর্বেই শহরের মিশন মোড়ে মানব বন্ধন, অনশন সহ নানাবিধ কর্মসূচী পালন করা করা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য বিধি মানা হচ্ছে না, করোনার কারনে কাজ না থাকায় পারিবারিক সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতন, জুয়া, মাদক সেবন সহ অন্যান্য অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষত, লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন এর খামারভাতি,নওদাবাস গোড়ল ইউনিয়ন এর বলাইরহাট, লোহাকুচি ও হাতিবান্ধা উপজেলার জাওরানী সীমান্তে মাদক ও গাজা সেবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক ও গাজা সেবীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বিজিবির বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন। তিনি জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জেলা পুলিশ জেলায় প্রায় ২হাজার বৃক্ষ রোপনের এক কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন।
সিভিল সার্জন ডা: নির্মলেন্দু রায় জানান, বর্তমানে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ফলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় কোন ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যাথা, জ্বর, সর্দি ও কাশি দেখা দিলে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে হবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন কোরবানী ঈদের জন্য জেলায় ১লাখ ১১হাজার গবাদী পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত বছর জেলায় পালনকৃত ৫৫হাজার গবাদী পশু কোরবানী দেয়া হয়েছিল। তাই সীমান্তে গরু চোরাচালান প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার উপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
সভায় লালমনিরহাট জেলা হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর মেশিন স্থাপন ও লোকবল বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। প্রতিটি মানুষ যাতে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক গুরুত্ব বজায় রাখা এবং হ্যান্ড ওয়াস কিংবা সাবান ব্যবহার করে হাত ধোয়া নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি মোবাইলকোট পরিচালনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই বিষয়ে জনগণকে অনুপ্রানিত করতে হবে। এ ব্যাপারে জন প্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম ও সমাজ কর্মীদের আরো তৎপর হওয়ার আহবান জানানো হয়।
এ ছাড়াও লালমনিরহাট জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। হাট-বাজার, দোকান পাটে , হোটেল রেষ্টুরেন্টে ও অন্যান্য জন সমাবেশে স্বাস্থ্যবিধি অর্থ্যাৎ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে জেলাবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়।
সভায় কৃষি পন্য ও মৎস্য উৎপাদন এবং হাসমুরগী ও পশু পালনের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়। সভায় গবাদী পশুর ল্যাম্পি রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার প্রতি আহবান জানানো হয়।
করোনা প্রতিরোধ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ১০০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল তত্বাবধায়ক ডা: সিরাজুল ইসলাম, লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু, মেজর রেজা-ই-রাব্বি, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ, জেলা বিশিষ্ট সাংবাদিক গেরিলা লিডার ড. এস এম শফিকুল ইসলাম কানু, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান প্রমুখ। এ সময় করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।