২৫ মার্চ থেকেই মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যাত্রীবাহী ও লাগেজ ভ্যান ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু, মালবাহী ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে মাসের নির্দিষ্ট কয়েকদিন দুই বগি বিশিষ্ট ‘বেতন ট্রেন’ নামক ট্রেনও চলাচল করছে। এমন অবস্থায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীবাহী ও লাগেজ ভ্যান ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত স্টেশন মাস্টার, ট্রেন চালক-গার্ডসহ মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ব-স্ব হেডকোয়ার্টার এবং স্টেশনে রয়েছেন। ফলে ২/১ দিনের মধ্যেই লাগেজ ভ্যান ট্রেন চালানো হবে। পরবর্তীতে করোনা প্রতিরোধে সব নির্দেশনা মেনে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা হবে।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানান, ২৫ মার্চ থেকেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু আমরা মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করছি। বর্তমানে ধীরে ধীরে পোশাক কারখানা চালুসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতার পথে হাঁটছে সরকার। আমরা ট্রেন চালাতে সব সময়ই প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পাওয়া গেছে লাগেজ ভ্যান ট্রেন চালানোর জন্য। লাগেজ ভ্যান, বিভিন্ন যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে একটি করে ‘লাগেজ ভ্যান’কোচ চালানো হত। এখন আমরা পুরো একটি ট্রেনই শুধু মাত্র লাগেজ ভ্যান দিয়ে চালাব।
রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ট্রেন পরিচালনার নির্দেশনা পেলে আমরা ট্রেন পরিচালনা করব। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছি। করোনার সময়ে ট্রেন পরিচালনা করতে হলে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, দূরপাল্লার ট্রেন পরিচালনা করলে এক একটি কোচে থাকা আসন সংখ্যার বিপরীতে অর্ধেক কিংবা তার বেশি সিট খালি রেখে টিকিট বিক্রি করব। অর্থাৎ নির্ধারিত দূরত্ব রেখে রেখে যাত্রীদের বসানো হবে। কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে ট্রেন চলাচল। তবে, বিষয়টি যেহেতু একেবারেরই নতুন আমরা কতটুকু সফল হব বলা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদেরও সর্বোচ্চ সর্তক হতে হবে।
সচিব বলেন, যাত্রীবাহী ট্রেন কবে থেকে চলাচল করবে এমনটা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে-আগামী ৫ মে মাসের পর সরকার লকডাউন তুলে দিলে সেই সময় ট্রেন পরিচালনার নির্দেশনা এলে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ট্রেন পরিচালনা করার প্রস্তুত সম্পূর্ণ করে রেখেছি।
বেশ কয়েকজন রেলওয়ে কর্মকর্তা জানান, ট্রেন পরিচালনা নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে, যদিও সেখানে সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত থাকতে পারেন নি। ট্রেন পরিচালনার পক্ষে-বিপক্ষে মতামত এসেছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন- ১৫ মের মধ্যে পুরো রেল ব্যবস্থা সচল করার জন্য। কেউ বলেছেন, সীমিত কিংবা শত নির্দেশনা মেনে ট্রেন পরিচালনা করলেও সাধারণ যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। বিশেষ দূরত্ব রেখে বসা, ট্রেন ওঠা কিংবা টিকিট কাটা সাধারণ যাত্রীরা কতটুক মানবেন।
সাধারণত ট্রেনে নির্ধারিত যাত্রীর তুলনায় ২/৩ গুন বেশি যাত্রী চলাচল করে। নির্ধারিত আসন ছাড়াও যাত্রীরা, ট্রেনের ভেতর, দুই বগির সংযোগস্থল, ইঞ্জিন ও ছাদে ভ্রমণ করেন।
এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক শামছুজ্জামান জানান, আমরা কিন্তু, মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করছি। ফলে রেলপথ সচল এবং প্রতিটি স্টেশনেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রী মহোদয়ের স্যারের কাছ থেকে লাগেজ ভ্যান ট্রেন চালানোর নির্দেশনা পেয়েছি।
নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা লাগেজ ভ্যান ট্রেনের মাধ্যমে মৌসুমি ফল মূল থেকে শুরু করে মাছ মুরগি, কাঁচামাল, চাল ডাল সবই পরিবহন করতে পারব। এখন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যতটুকু সারা পাব, সেই তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা বাড়াব।প্রায় ১০/১২টি ভ্যান এক সঙ্গে জোড়া দিয়ে আস্ত একটা পার্সেল ট্রেন চালাব। রেলপথে মালামাল বহন স্থল ও জলপথের চেয়ে অনেক সাশ্রয় নিরাপদ। আমরা উত্তরবঙ্গ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল ও চট্টগ্রামের পথে পার্সেল ট্রেনগুলো পরিচালনা করব। সরকারের নির্দেশনা পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন কি করে পরিচালনা করা যায়, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) সকালে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন।
রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহান জানান, আমরা প্রস্তুত নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনা করব। এ ক্ষেত্রে নিশ্চয় সংশ্লিষ্টদের কঠোর হতে হবে। সাধারণ যাত্রীরা করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের নিয়ম-কানুন, নির্দেশনা মেনেই ট্রেনে ভ্রমণ করতে হবে।
পরিবহন বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী পরিবহন করা খুবই জটিল হবে। ট্রেন যাত্রীরা কোনো সময়ই ভ্রমণের ক্ষেত্রে খুব একটা নিয়মনীতি মানেনি। তবে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, কোনো স্টেশন থেকেই যেন টিকিট না দেয়া হয়। শতভাগ টিকিট অনলাইনেই বিক্রি করা হবে। টিকিট বিহীন কোনো যাত্রী স্টেশনেই প্রবেশ করতে পারবে না।
তবে, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এমনটা শুধু আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে করা সম্ভব। মেইল লোকাল কিংবা কমিউটার ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। এসব ট্রেনের ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে না।