ঢাকার রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপিতে সাফল্য পেয়েছে । হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্লাজমা থেরাপি দেয়ায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা একদিনেই বেড়েছে ৩০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত। এখন থেকে পুলিশ হাসপাতালেই যেনো রক্তের প্লাজমা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়েও কাজ চলছে বলে জানানো হয়।
নতুন করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করায় লাখ লাখ রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে উন্নত দেশগুলোও। এই অবস্থায় নতুন এই রোগে আক্রান্তদের সারিয়ে তুলতে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের রক্তের প্লাজমা অসুস্থদের দেয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ নানা দেশ। রক্তের তরল, হালকা হলুদাভ অংশকে প্লাজমা বা রক্তরস বলে। তিন ধরনের কণিকা ছাড়া রক্তের বাকি অংশই রক্তরস। মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরের রক্তের প্রায় ৫৫ শতাংশই রক্তরস।
চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা এ ভাইরাস মোকাবেলা করে টিকে থাকতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসকে আক্রমণ করে। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির প্লাজমায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ওই অ্যান্টিবডিই অসুস্থদের সারিয়ে তোলার জন্য ব্যবহার হবে। বাংলাদেশেও বিষয়টির সম্ভাব্যতা দেখতে এপ্রিলের শুরুতে আগ্রহের কথা জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজির অধ্যাপক ডা. এম এ খান। ১৯ এপ্রিল অধ্যাপক ডা. এম এ খানকে সভাপতি করে ৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর ধারাবকাহিকতায় গত শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্তপরিসঞ্চালন বিভাগে কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা কয়েকজন চিকিৎসকের প্লাজমা দান করেন। এর পর থেকেই প্লাজমা সংগ্রহ করেছে হাসপাতালটি। দুই দিনের মধ্যেই পুলিশ হাসপাতালে রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহ শুরু হবে বলেও জানান তিনি। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মনোয়ার হাসানাত খান ভোরের কাগজকে বলেন, প্লাজমা থেরাপী নিয়ে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আনা প্লাজমা আমাদের হাসপাতালে ভর্তি দুজন ক্রিটিকাল রোগীর শরীরে প্রয়োগ করি আপমরা।
সে সময় এক রোগী খুব দ্রুত রেসপন্স করতে শুরু করে। অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা একদিনেই ৩০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত তার বেড়ে যায়। অপর রোগীও প্রথম রোগীর মতো রেসপন্স না করলেও তারও কিছু উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। তবে রক্তের প্লাজমা আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে সেপারেশন করে নিয়ে আসতে হচ্ছে। তবে আমরা পুলিশ হাসপাতালেই প্লাজমা প্রক্রিয়াকরণের মেশিন বসানোর কার্যক্রম শুরু করেছি। দ্রুতই প্লাজমা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালেই সম্ভব হবে।