নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর পুঠিয়ায় স্ত্রী ও পাঁচ মাসের শিশুকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে মাদকাসক্ত স্বামী ফিরোজ আলী (২৬)। তবে ঘুমিয়ে থাকার কারণে আড়াই বছরের ছেলে শিশু ফাহিম আলী বেঁচে যায়।
গতকাল সোমবার (৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে উপজেলার গোপালহাটি ওয়ার্ডের ফকিরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- পলি খাতুন (২০) ও তার পাঁচ মাস বয়সী মেয়ে ফারিয়া খাতুন।
আজ মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) ভোরে রাজধানী ঢাকার দারুসসালাম এলাকা থেকে ঘাতক স্বামী ফিরোজকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে রাজধানী ঢাকা থেকে রাজশাহীর পুঠিয়া থানায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ফিরোজ আলী বিয়ের আগে থেকেই নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। গত চার বছর পূর্বে পুঠিয়া পৌরসভার ৪নং কৃষ্ণপর ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার জুলহাস আলীর মেয়ে পলি খাতুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নেশার টাকার জন্য সে তার বাড়ির বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। এ নিয়ে স্ত্রীর পলির সঙ্গে তার ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। মাঝেমধ্যে ফিরোজ তার স্ত্রীকে শারিরিক নির্যাতন করতেন। সোমবার দিবাগত রাতে নেশার টাকার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়।
এরপর রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ফিরোজ আলী তার স্ত্রী ও মেয়ে শিশুকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। তবে ঘুমিয়ে থাকার কারণে আড়াই বছরের ছেলে শিশু ফাহিম আলী বেঁচে যায়। পরে ফাহিম আলীর কান্না শুনতে পেয়ে ফিরোজের মা-বাবা ঘরে ঢুকে পলি ও ফরিহাকে বিছানায় অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুঠিয়া থানা পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে।
রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পুলিশ নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। আর মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
তিনি আরো জানান, ফিরোজ আরপিএল এলিগেন্স বাসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার এক পা কাটা পড়ে। এরপর থেকে ফিরোজ হেরোইন সেবন শুরু করে। একপর্যায়ে তিনি অতিমাত্রায় হেরোইন আসক্ত হয়ে পরেন। হেরোইন কেনার টাকার জন্য ফিরোজ মাঝেমধ্যেই স্ত্রী পলি খাতুনের ওপর নির্যাতন চালাতেন। এ নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ ছিল রোজকার ঘটনা। এর সূত্র ধরেই রাগে-ক্ষোভে স্ত্রী ও কন্যাশিশুকে ঘুমের ঘোরে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহতদের গলায় কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। আর পাশেই বালিশ পড়ে ছিল। এই থেকে ধারণা করা হচ্ছে বালিশ চাপা দিয়েই তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আটক ফিরোজকে রাজশাহী নিয়ে আসার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।