বেগম খালেদা জিয়া দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তৃতীয় বারও শপথ নিয়েছিলেন কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। গনবিক্ষোভে সরে যেতে হয়েছে তাকে। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে সব জড়িপেই আওয়ামী লীগকে বিজয়ী দেখানো হয়েছিল। বি এন পি তখন আগাম হরতালও ডেকেছিল কারচুপি হবে অনুমান করে। অলৌকিক ভাবে সেই নির্বাচনে বি এন পি’র আসন সংখ্যা বেড়ে যায়। বেগম জিয়া হন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ৯৬ সালে বি এন পি পরাজিত হয়। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এই পরাজয় মেনে নিতে পারেননি বেগম জিয়া। প্রতিহিংসা প্রকাশ করতে নিজের জন্ম তারিখটি বদলে দেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদত দিবস ১৫ ই আগষ্টকে বেগম জিয়ার জন্ম তারিখ ঘোষনা দেন। জাতীয় শোক দিবসে এক মন ওজনের কেক কেটে জন্মোৎসব পালন করেন ঘটা করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হয়ে জন্ম তারিখ লিখেছিলেন অন্যটি। জন্ম তারিখ নিয়ে এই অশোভন মিথ্যাচারটি বেগম জিয়ার সমর্থকরাও গ্রহন করেনি।
আওয়ামী লীগ সরকার ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর খূনীদের বিচার শুরু করে। বি এন পি সেই বিচার নিয়ে কটাক্ষ করেছে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও বি এন পি শুধু বিরোধীতা করেছে। ষড়যন্ত্র করেছে গোপনে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বি এন পি’র বিজয় সেই ষড়যন্ত্রের ফসল। এই ষড়যন্ত্র দেশে গনতন্ত্র উদ্ধারের পথেটিকে রুদ্ধ করে দেয়। শুরু হয় সংঘাতের রাজনীতি। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে চলে নতুন ষড়যন্ত্র। আন্দোলন হয় রাজপথে। সর্বাত্ত্বক অপচেষ্টা করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন পর্ব শুরু হয় দেশে। এই ক্ষমতা দখলের রাজনীতিই টেনে আনে সেনা সমর্থীত ফখরুদ্দিন সরকারকে। শেখ হাসিনাকে বন্দী করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে খালেদা জিয়াও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। মোড় নেয় নতুন রাজনীতির। আইনি লড়াই করে শেখ হাসিনা মুক্ত হন। বেগম জিয়াও ছাড়া পান। ২০০৮ সালে নির্বাচন পরিচালিত হয় সেনা সমর্থীত ফখরুদ্দিন সরকারের অধীনে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় পায়। বি এন পি পরাজিত হয়ে শপথ নিতে বিলম্ব করেছে। শপথ নিয়েও সর্বোচ্চ কার্যদিবসে অনুপস্থিত থেকেছে সংসদে। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানেও যোগ দেননি বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। বেগম জিয়া ব্যক্তি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়েছেন প্রতিনিয়ত। অসৌজন্যমুলক আচরন করেছেন রাষ্ট্রীয় অতিথির সংগেও। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার লঙ্ঘন করেছেন। বেগম জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর অকাল মৃত্যু সংবাদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছুটে গিয়েছিলেন শোক জানাতে। প্রধানমন্ত্রীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বেগম জিয়ার নির্দেশে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এহেন আচরন দেশবাসীকে হতাশ করেছে। বেগম জিয়ার এমন ঔদাত্বপুর্ন আচরনে জনগন ক্ষুদ্ধ হয়েছে। দলের নেতারাও অনেকে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন কিন্তু প্রকাশ করেনি পদ হারানোর ভয়ে।
সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করা গনতন্ত্রের শিষ্ঠাচার। ন্যয্য দাবী আদায়ে জনগনের হয়ে হরতাল কর্মসূচী দেওয়াও যৌক্তিক। কিন্তু সাধারন জনগনের জীবনকে দুর্বিসহ করে আগুন সন্ত্রাস করা গনতন্ত্রের নিয়ম নয়। জীবন্ত মানুষ পুরিয়ে মারা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। অন্যতম প্রধান দলের নেতা হিসাবে বেগম জিয়া এই দায় এড়াতে পারেননা। বি এন পি এবং তাদের জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবী করেছেন। কিন্তু সেই সরকারের রূপরেখাটি কেমন হবে উপস্থাপন করতে পারেনি। দাবী আদায়ে লক্ষ্যহীন হরতাল কর্মসূচী দেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। কারচুপির অভিযোগ শোনা যায় সব নির্বাচনেই। কিন্তু নির্বাচনের আগেই কারচুপি হবে সন্দেহ করে নির্বাচন বর্জন করা দলের দুর্বলতাকেই প্রমান করে দিয়েছে।
সংগতভাবেই বি এন পি রাজনীতি চর্চায় পিছিয়ে পরেছে। ক্ষমতায় থেকেও বি এন পি দুর্নীতি করেছে সীমাহীন। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে খাম্বা বিক্রি করে পরিচিতি পেয়েছে জনগনের কাছে। হাওয়া ভবনে বসে সমান্তরাল সরকার পরিচালনা করেছে তারেক। সিনিয়র মন্ত্রীরাও হাওয়া ভবনে গিয়ে অপেক্ষা করেছে তারেকের সাক্ষাত পেতে। এর পর যা ঘটেছে তা এখন আর অজানা নেই কারোই। এতিমখানার অর্থ আত্নসাধ মামলায় বেগম জিয়া এখন দন্ডপ্রাপ্ত আসামী। শর্ত স্বাপেক্ষে জামিন পেলেও মূক্ত নন। মুক্ত হলেও নির্বাচনে অযোগ্য থাকবেন আগামী পাচ বছর। দলের নেতৃত্বটিও ছেলে তারেকের হাতে। লন্ডনে বসে তারেক বিলাসী জীবন কাটাচ্ছে কর্মীদের দেওয়া অর্থে। টাকা না পাঠালে থানা কমিটিও গঠন হয়না। অর্থ পাচার মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত তারেক পুলিশের খাতায় পলাতক আসামী। লন্ডনে বসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিরন্তর অশ্রাব্য বক্তব্য দিচ্ছে তারেক। এসব দেখে দলের নেতারাই বলছে ” বাবা তারেক এবার তুমি ক্ষ্যন্ত হও। দলকে আর ক্ষতি করোনা”।
বি এন পি রাজনীতিতে এসে দুটি ক্ষতি করেছে। (এক) নিজেরা গনতন্ত্র চর্চা করেনি (দুই) দেশে অন্য কোন গনতান্ত্রিক শক্তি গড়ে উঠতে দেয়নি। এরশাদও বি এন পি’র অনুকরনে দল গঠন করে রাজনীতি করেছেন। এরশাদের মৃত্যুর পর তার দল জাতীয় পার্টি এখন মুসলীম লীগের পথে হাটছে। বি এন পি কিংবা জাতীয় পার্টি কোন দলই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হওয়ার সাংগঠনিক শক্তি নেই। জামাত নির্ভর বি এন পি এখন নেতৃত্বহীন নিঃস্ব দল। জোট ছাড়া একক বি এন পি’র অবস্থান জাতীয় পার্টির চেয়ে বড় কিছু নয়। জোট ধরে রাখার যোগ্য নেতৃত্বও নেই বি এন পি’তে। বি এন পি এখন আর আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ নয়। আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগ। হিসাবটি গন্য করে আওয়ামী লীগে সঙ্গে সংস্কার দরকার। যারা নেতৃত্ব পেয়ে ভাগ্য গড়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে ত্যগী নেতা কর্মীদের চেনা দরকার। তা নাহলে আগামী নির্বাচনে এরাই হবে ফেক্টর। বি এন পি’ও সেই ফলাফলকে পুজি করতে চায়। জোট করে সরকার গঠনের দিবাস্বপ্ন দেখে প্রতিদিন। ইতিমধ্যে বহু বি এন পি নেতা আওয়ামী লীগে ঢুকে পরেছে। শোনা যায় জামাতও রয়েছে এই তালিকায়। যারা এখন মুজিব কোট গায়ে জড়িয়ে ঘুড়ে বেড়ায় তারা সব আওয়ামী লীগের কর্মী বা নেতা নয়। বি এন পি এই সুযোগটি হাতছাড়া করবেনা৷ এটাই হবে আগামী নির্বাচনে বি এন পি’র ষ্ট্রেটেজি। ঘরের শত্রু বিভীষন৷ খনার বচনটি যেন আওয়ামী লীগের পরিনতি না হয়।
আজিজুর রহমান প্রিন্স,
কলামিস্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ।