বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যিক ভেষজ হিসাবে রসুন এর ব্যবহার প্রসিদ্ধ। রসুনের রয়েছে নানা রকমের পুষ্টিগুণ। শরীর ভাল রাখা ছাড়াও বিশেষ কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণে রসুন খাওয়ার উপকারিতা অনস্বীকার্য। তাই অনেকেই নিয়ম করে প্রতিদিন রসুন খেয়ে থাকেন। এজন্য কেউ কেউ কাঁচা রসুন খান আবার কেউ কেউ রান্নাতে এটি পরিমাণে বেশি দিয়ে খান। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স ও আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত রসুন নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। কারণ এর ব্যতিক্রম হলে তা স্বাস্থ্যের উপকারের বদলে জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর আমরা রান্নার সময় মশলা হিসেবে যেভাবে রসুন ব্যবহার করি এতে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা
রসুন কৃমি নাশ করতে, শ্বাস কষ্ট কমাতে, হজমে সহায়তা করতে, প্রস্রাবের সমস্যায়, শ্বাসনালী মিউকাস মুক্ত করতে, এ্যাজমা রোগের উপশমে, হাইপারটেনশন কমাতে, চুল পাকানো কমাতে, শরীরে কোলেস্টেরলের লেভেল কমাতে, হাড়ের বিভিন্ন রোগে রসুন সাহায্য করে। ভেষজ গুণের জন্য কাঁচা রসুন বেশি উপকারী। রসুনের মধ্যে রয়েছে এলিসিন নামে এক জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে কার্যকর। এই এলিসিন নামে যে কম্পাউন্ড রসুনে পাওয়া যায়, তার কারণে রসুনকে সুপারফুডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে জেনে নেওয়া যাক এখন রসুন খাওয়ার উপকারীতা সম্পর্কে।
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি
রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ একে অনেকটা ওষুধের মতোই তৈরি করেছে, যার দরুন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খালি পেটে রসুন খেলে এই উপকার বেশি। বর্তমানে এই অতিমারি পরিস্থিতিতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুব জরুরি, তাই প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খেতে পারেন।
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বাড়ায়
প্রতিদিন সকালে নিয়মিত খালি পেটে দুই কোয়া করে রসুন খেলে রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যার দরুণ ব্লাড ক্লটিং বা রক্ত বাধাগ্রস্ত হয়ে যেসব রোগের সৃষ্টি হয়, তা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়াতেও বেশ সহায়ক
পুরুষের যৌনক্ষমতা বিভিন্ন কারণে কমে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়মিত করে দুই কোয়া রসুন খান তাহলে ধীরে ধীরে যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভিন্ন ধরনের মতামত থাকলেও পুরুষের ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে রক্তের সাবলীল গতি। রসুনে এই কাজ করে বলেই যৌনক্ষমতার কথা বলা হয়ে থাকে।
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ হৃৎপিণ্ডের শক্তিবর্ধক
যাঁরা হৃদপিণ্ডের নানা ধরণের সমস্যা নিয়ে বিব্রত আছেন যেমন- মাঝেমধ্যে বুকের বাঁ পাশে ব্যথা অনুভূত হয়, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হয়, তাঁদের জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলতে হবে, এতে করে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হবে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির কারণে হৃদপিণ্ডের ব্লকগুলো আর বাড়বে না এবং ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারবে না, বুকের ব্যথা কমে যাবে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হবে না।
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অনেক পথ্যের অন্যতম রসুন। শরীরের এলডিএল বেড়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়, প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন সকালে খালি পেটে খেলে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকবে না। রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ সংক্রমণ প্রতিরোধ
মানুষের শরীরে যেকোনো সময়ে সংক্রমণ ঘটতে পারে। সংক্রামক রোগ এমন একটি অবস্থা, যার কোনো পূর্বলক্ষণ থাকে না। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে শরীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ
ফুসফুসে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হতে পারে। অ্যালার্জি সমস্যা, ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটতে পারে, যা থেকে মুক্তি পেতে রসুন পিষে রস খেলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে, এছাড়াও এর সঙ্গে হলুদ এর গুঁড়া মিশিয়ে গরম পানি দিয়ে গুলিয়ে চায়ের মতো পান করলে সংক্রমণ থাকে না। আর এর সঙ্গে প্রতিদিন নিয়ম করে দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খাওয়া ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে অত্যন্ত কার্যকর।
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ রক্ত পরিশোধিত করে
প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া রসুন খালি পেটে নিয়মিত খেলে রক্তের পরিশোধনক্ষমতা বেড়ে গিয়ে রক্ত চলাচলে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে, তাতে শরীর ভালো থাকে, নিরোগ দেহের জন্য সাবলীল রক্ত চলাচল অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ ত্বক ভালো রাখে
প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে ত্বক ভালো থাকে, ত্বকে বার্ধ্যকের ছাপ পড়ে না, চেহারায় কোনো দাগ থাকলে কমে যায়। রসুন ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ শরীরে অবাঞ্ছিত ফোলা বা গোটা
অনেকের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফোলা পিণ্ড থাকে, বাড়ে কমে না, ব্যথাও করে না, কিন্তু ফোলাটা মিশেও না, এমন ফোলা বা গোটা শরীর থেকে মুছে ফেলতে প্রতিদিন ছয়-আট কোষ রসুন সকালে খালি পেটে এবং দুপুর ও রাতে খাবার পর দুইটি করে রসুন কোষ খেলে ফোলাটা ধীরে ধীরে মিশে যাবে। অথবা দুই কোয়া রসুন হালকা করে ভেজে তা খেতে হবে।
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ সেল ড্যামেজ রোধ করে
রসুনে উপস্থিত অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ‘সেল ড্যামেজ’ ও ‘এজিং’ রোধ করে। ব্রেনের সেল ড্যামেজ কম হয়ে আলঝেইমারস ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ হাড়ের শক্তি বাড়ায়
একটা বয়সের পর বিভিন্ন কারণে নারীদের হাড়ের শক্তি কমে যায়। প্রতিদিন ২ গ্রাম করে রসুন খেলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রায় ভারসাম্য থাকে, যাঁদের কম থাকে, তাঁদের কিছুটা বাড়ে। ফলে হাড়সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটা কমে যায়। এমনকি যে নারীদের মেনোপোজ হয়ে গেছে, তাঁরাও নিয়মিত রসুন খেলে অনেক উপকার পাবেন।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা মশলা হিসেবে রান্নায় ব্যবহার করে
রান্নায় রসুনের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। রসুনের বিভিন্ন ডোজ হয়ে থাকে, রান্নায় ও নানা ভর্তায় রসুনের উপস্থিতি থাকে। রসুনের গুণ পেতে সকালে খালি পেটে খাওয়া উত্তম, আমাদের গ্রামবাংলায় রসুন–মুড়ি খাওয়ার একটা প্রবণতা আছে, এতে কিছু উপকার হলেও বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় কিছু ভালো ফল পাওয়া গেলেও সব ঔষধি গুণ পাওয়া যাবে না।
অনেকের ধারণা, অ্যাজমার জন্যও রসুন উপকারী, কিন্তু ব্যাপারটা ভিন্ন, এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল সক্রিয়ভাবে কাজ করে কিন্তু অ্যালার্জিক অ্যাজমা থাকলে রসুন অ্যালার্জি বাড়াতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে রসুন এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শই দেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকের রসুনে অ্যালার্জি হয়ে থাকে, আর নিয়মিত এটি খেলে যদি কোনো অসুবিধা বোধ করেন, তখন রসুন না খাওয়াই ভালো, তবে স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। অনেক ধরনের রসুন বাজারে পাবেন, তার মধ্যে দেশি এককোষী রসুন সবচেয়ে ভালো।