মোঃলোকমান হোসেন,যশোর জেলা প্রতিনিধি:-অন্যরকম এক সংগ্রামে নেমেছে আইডিয়া পিঠা পার্ক।এই সংগ্রাম দেশিয় ঐতিহ্যের পিঠা’র সম্ভার ফিরিয়ে আনার।শুধু ফিরিয়ে আনাই নই নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এর পরিচয় ঘটিয়ে ‘বিদেশি ফাস্টফুড’কে হটিয়ে দেয়ারও স্বপ্ন তাদের।আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে একঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণ।এখানে কলেজ শিক্ষার্থীদের বিকল্প উপার্জনের পাশাপাশি লাভঅংশের পুরোটা দিয়েই চলছে নানান সামাজিক কাজ।তাই প্রতিষ্ঠার দু’বছরের মধ্যেই ব্যতিক্রমী এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে আইডিয়া পিঠা পার্ক।
প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা জানান, আইডিয়া পিঠা পার্ক যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ভিন্ন আয়োজনের এই প্রতিষ্ঠানটিকে।যশোরের খড়কী শাহ্ আব্দুল করিম রোডে আইডিয়া পিঠা পার্কে গিয়ে দেখা যায় অন্যরকম এক পরিবেশ।শহরের কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশের মাঝে এদেশের হারিয়ে যাওয়া পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।আইডিয়া পিঠা পার্কে রয়েছে ১০১ রকম পিঠার সম্ভার। এগুলো দেখে চমকিত হবেন যেকেউ।যেসব পিঠায় দাদী-নানীদের স্পর্শ ছিলো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শহুরে জীবনের যান্ত্রিকতায় তা হারিয়ে যেতে বসেছে।সেইসব পিঠা যেন একত্রিত হয়ে নতুন প্রাণ পেয়েছে এখানে।ব্যক্তিবিশেষের পছন্দ অনুযায়ী ঝাল-মিষ্টি হরেক রকম পিঠার মিলন মেলা আইডিয়া পিঠা পার্কে।এখানে এখন নিরলস পরিশ্রম করছেন ৪৩ জন স্বেচ্ছাসেবী।যারা সবাই কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।এই এক ঝাঁক আলোকিত উদ্যোক্তা প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে কাজ করছেন পিঠাশিল্প রক্ষার্থে।
এখানে পিঠা কিনতে আসা শহরের শংকরপুর এলাকার গৃহবধূ ইয়াসমিন আক্তার জানান,ঘরোয়া আয়োজনে অতিথি আপ্যায়নে তিনি পিঠা কিনতে এসেছেন।এর আগেও এখান থেকে পিঠা কিনেছেন।ফাস্ট ফুডের পরিবর্তে পিঠা-পায়েসে অতিথিরা খুবই খুশি হন।এছাড়া পরিবারের সদস্যরা খুব মজা করে এই পিঠা খান।
‘হৃদয় হরণ’ ও ‘ভাপা পিঠা’ খেতে খেতে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার স্বপ্নদ্রষ্টা যশোর সরকারি এম এম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীনের সাথে।তিনি জানালেন শূন্য হতে যাত্রা শুরু করা আইডিয়া পিঠা পার্কের ঊষালগ্নের প্রতিবন্ধকতার কথা,আজকের পর্যায়ে পৌঁছানোর কথা,আগামী পরিকল্পনার কথা।
হামিদুল হক শাহীনের মতে, আজকের জনপ্রিয় পিৎজা কোনো নিক্তিতেই এ দেশের মাংস-ছিটা রুটির চেয়ে এগিয়ে ছিল না।যদিও শক্তিশালী মার্কেটিং আর কর্পোরেটের ছোঁয়া আমাদের খাদ্যাভ্যাসে এনে দিয়েছে পরিবর্তন।আমরা হারাতে বসেছি বাংলার বৈচিত্র্যময় পিঠার সম্ভার। অথচ যথাযথ উদ্যোগ নেয়া গেলে আজ ফাস্টফুডের নামে শীতল বাতাসে বসে নিম্নমানের বিদেশী খাবার খাওয়া লাগতো না।পিঠা হতে পারতো আপ্যায়নের অনন্য উপকরণ।আজ যদি মানুষ শীতল বাতাসে বসে আয়োজন করে শীতপ্রধান দেশের বার্গার খেতে পারে তাহলে কেন ঠান্ডায় জমে যাওয়া মানুষেরা আমাদের ভাপা পিঠা খাবে না?কেন আমাদের পুলি, পাকান,লবঙ্গ লতিকা,হৃদয় হরন, ছিটারুটি মাংসের স্বাদ বিশ্ব পাবে না?পিঠার মতো এমন অনন্য খাদ্য সম্ভার যে আমাদের রয়েছে, যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারলে পিঠাই হতে পারে আমাদের অর্থনীতির আরেকটি প্রাণশক্তি। কথা হয় আইডিয়া পিঠা পার্কের কো-অর্ডিনেটর সোমা খানের সাথে।তিনি জানালেন তাদের স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা।সোমার মতে, মার্কেটিং ও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব কাটিয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বদরবারে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে বাংলার পিঠা।
সোমা খান আরো বললেন,) একদিন আইডিয়া পিঠা পার্ক থেকে সৃষ্টি হবে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান।এদেশের পাটিসাপটা, পাকান,পুলি,ভাপা,চিতই পিঠাসহ বাংলার সব মুখরোচক পিঠার নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।যদিও তারা জানেন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না।তারপরও তাদের স্বপ্ন ফাস্টফুডের দোকানগুলোর শোকেস ভরে উঠবে দেশিয় পিঠার সম্ভারে।