তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের আদালতে ৯ শত ২৪ টি মামলায় অন্তত ১ শত কোটি টাকার মামলা হয়েছে। এ মামলা গুলো দায়ের করা হয়েছে জুলাই-২০ থেকে জুন-২১ এর সময়ের ব্যবধানে। অধিকাংশ মামলা দায়ের হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
মামলায় তালিকায় আসামী আছেন কৃষক, প্রান্তিক নারী, খেটে খাওয়া বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমজীবি মানুষ। মামলা দায়ের করায় শীর্ষে রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি, সরকারি ব্যাংক, এনজিও এবং গ্রাম শহরের সুদের (দাদন) কারবারিরা।
মৌলভীবাজার আদালত সূত্রে জানা যায়, জুলাই-২০ থেকে জুন-২১ পর্যন্তু মোট ৯ শত ২৪ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এনআই এ্যাক্ট ১৩৮ ধারায়। এরমধ্যে ৭৮ টি মামলার নিষ্পত্তি সূত্রে বিচাররিক কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। আদালত বদল হয়েছে ৪ শত ৪২ টি ও বিচারাধীন রয়েছে ৪ শত ৪ টি মামলা।
মৌলভীবাজার আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফারুক আহমদ ভিজিটার বাংলা নিউজের প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন, এনআই এ্যাক্টের ১৩৮ ধারার মামলার ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণের হিসেব নিদিষ্ট করে মোট করা হয় না। তাই মামলার বিপরীতে সঠিক টাকা পরিমাণ বলা যায় না।
তিনি আরো জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যে মামলা গুলো হয়ে আসছে তা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একজন ব্যক্তি মামলার বাদী হন তাই কোন প্রতিষ্ঠান কতটি মামলা করেছে সেটাও তারা বলতে পারেন না।
তবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৯ শত ২৪ টি মামলার বিপরীতে টাকার পরিমাণে অন্তত কয়েক শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ফৌজদারি ও অর্থ ঋণ আদালত মিলিয়ে এর পরিমাণ অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
এ ব্যাপারে আদালত প্রাঙ্গনে কথা হয় মামলার আসামী অনেক ভোক্তভোগীদের সাথে। তারা কেউ এসেছেন ব্যাংকের মামলায়, কেউ এনজিওর মামলায় কেউ এসেছেন সুদ কারবারিদের হাতে নাজেহাল হয়ে।
তাদের অধিকাংশের দাবী মহামারি কোভিড-১৯ এর আগে থেকেই ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিলো পরবর্তীতে তাদের ব্যবসা ভেসে গেছে কোভিড-১৯ ভয়াল থাবায় কিন্তু কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা তারা পাননি। উল্টো প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে উপেক্ষা এ সময়ে এ খাতের ক্ষুদ্র ঋনকে খারাপ লোনে পরিনত করে হয়রানি করার উদ্দেশ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে একাধিক ব্যাংক এনজিওর উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় তবে তারা কোন বক্তব্য দিতে তারা রাজি হননি । এ ব্যাপারে কথা হয় মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মিজানুর রহমান মিজানের সাথে। তিনি মনে করেন,ব্যাংকের পাওনা টাকা আদায় করার খাতিরে ব্যাংক মামলা করতে বাধ্য হয়। তিনি জানান, গত মাসে দুই চেকের বিপরীতে ব্যাংকের পাওনা ৪০ লাখ টাকা আদায়ের জন্য তিনি দুই মামলার আইনজীবী হয়েছেন।
মানবাধিকার কর্মী এ্যাড.পংকজ সরকার এর মতে আইনের দৃষ্টিতে সকলের অধিকার সমান কিন্তু অনেকেই স্বাক্ষী প্রমাণধির অভাবে এ জাতীয় মামলায় পরাজিত হয়ে যান।
মৌলভীবাজার আদালতের একজন বিচারক বলেন, অধিকাংশ ব্যক্তি লোভে পরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান-কে অগ্রিম চেক দিয়ে রাখেন। সেই চেকই পরবর্তীতে প্রমাণ হিসেবে হাজির করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আদালতে মামলা হয়। সেই হিসেবে বিচার করা হয়। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে আরো সর্তক হতে হবে। নয়তো বা এজাতীয় মামলা হয়রানির জন্য নিজেদের সতর্ক হতে হবে।