তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে দেশ-বিদেশী বহু দর্শানর্থীদের আগমন ঘটে। এ জেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হামহাম জলপ্রপাত, বাইক্কা বিল, হাকালুকি হাওরসহ ১৯২টি চা বাগান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মৌলভীবাজার শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে সবুজ অরণ্যে অবস্থিত বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক। এটিকে সরকারিভাবে ইকোপার্ক ঘোষনা করা হয় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে। রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষনা করা হয় ১৯১৬ সালে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, আয়তনে ৮৮৭ একর ভূমি নিয়ে অবস্থিত বর্ষিজোড়া ইকোপার্কটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় অবস্থিত। উত্তরে বর্ষিজোড়া এলাকা, দক্ষিণে বিমান বাহিনীর রাডার স্টেশন, প্রেমনগর চা বাগান, পূর্বে দেওড়াছড়া চা বাগান ও পশ্চিমে জগন্নাথপুর। চিরসবুজ এই বনে রয়েছে শাল, গর্জন, শিমুল, বনাক, সেগুন, জারুল, লোহাকাট, আমলকিসহ আরো হরেক রকমের বৃক্ষ। জীবজন্তুদের মধ্যে রয়েছে বানর, হনুমান, শিয়াল, মেছাবাঘ, উঁদ, কাঠবিড়ালী, সজারু, বনরুই, কাঁকড়া, খরগোশ, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতীর জীবজন্তু।
সরেজমিনে সম্প্রতি গেলে দেখা যায়, পার্কটির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। পাশের ছোট একটি ফটক দিয়ে ইকোপার্কটির ভেতর দিয়ে স্থানীরা যাতায়াত করেন। পার্কের ভিতরের একটি স্থাপনায় কর্তব্যরত কর্মচারীরা থাকলেও ঘরটি তালাবদ্ধ। বনের একটু ভেতরে গেলে দেখা যায় দুই টিলার দুই ধারে দুটি কটেজ রয়েছে। কটেজে গেলে দেখা যায়, প্রায় নতুন করে নির্মিত এই স্থাপনার দরজা-জানালা ভেঙ্গে চৌচির। কটেজে কোন আসবাবপত্র নেই। উন্মুক্ত কটেজ দুটিতে মরিচিকা ধরেছে। এখানের স্থানীয়দের গরু-বাচুর ও বন্য প্রাণীদের আবাসস্থলে পরিনত হয়েছে দুটি কটেজ। বনের ভেতরের বিশাল আয়তনের যতদূর চোখ যায়, এখানকার কর্তব্যরত কোন চৌকিদার কিংবা গার্ডদের কাউকে দেখা যায়নি।
পার্কের ভেতরে একটি ক্যান্টিনে চা বিক্রি করেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, এই ক্যান্টিন সরকারি। আমি শুধু কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করছি। তিনি বলেন, এটি ইকোপার্ক নামে ঘোষনা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি এখনো। এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, এখানে আসার পরিবেশ থাকলে পর্যটক অবশ্যই আসতো। এখনো আসার পরিবেশ হয়নি।
তবে, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্ষিজোড়া ইকো পার্কে ২০০৬ সাল থেকে উল্যেখযোগ্য তেমন কোন উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। এখনো অনেক কাজ করতে হবে। ইতিপূর্বে সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছিল। সামান্য কাজ ছাড়া আর কিছুই করা যায়নি। কার্যালয় সূত্র আরো জানায়, এই পার্কটিকে আধুনিকায়ন করতে এর আগে চেষ্টা করা হয়েছে তবে প্রজেক্ট পাশ করানো সম্ভব হয়নি।
বনের ভেতরের অংশে গেলে দেখা যায়, প্রায় শত বছর বয়সী মুল্যবান শত শত বৃক্ষ ঠায় দাড়িয়ে আছে ঠিলায় ঠিলায়। স্থানীয় অনেকের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে তারা জানান, এই পার্কে লোকবলের অভাব। রাতের বেলা বনের যে কোন যায়গা থেকে বৃক্ষ কেটে নিলে মানুষ তো দূরের কথা কোন কাক-পক্ষীও টের পাবে না। এই সুযোগে দিনের পর দিন কেটে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার গাছ। সরেজমিনে বনের ভেতর ঘুরে যত দূর চোখ যায়, সেখানে প্রায় দেড় হাজার জারুল, মেহগনি ও সেগুন গাছ চোখে পড়ে। প্রতিটি বৃক্ষের দাম সর্বনিম্ন ৪০ হাজার টাকা করে ধরা হলে দেড় হাজার গাছের দাম পড়ে ৬ কোটি টাকা। ধারনা করা হয়, বনের অন্যান্য বৃক্ষ মিলে প্রায় ৩০ কোটি টাকার বৃক্ষ রয়েছে বর্ষিজোড়া ইকো পার্কে।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে’র বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করীম চৌধুরীর সাথে বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক নিয়ে আলাপচারিতা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, দর্শনার্থী এখানে আসতে পারেন। ইতিপূর্বে আমরা কিছু কাজ করেছি। আরো সাজিয়ে কিছু কাজ করতে হবে। এর আগে আমরা হাতেই নিয়েছিলাম। সামন্য কাজ ছাড়া আর কিছুই করতে পারি নাই্।
এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি স্বীকার করেন “দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে আমরা কোন উন্নয়ন করতে পারিনি”। তিনি বলেন, এখানে অবৈধভাবে কোন গাছ কাটা হয় না। দীর্ঘ ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও কেন এর উন্নতি হচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জাববে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। “কিছু মূল্যমানের কাজ যাচাই বাচাই চলছে, তবে সময় লাগবে।”
বনে মাদকসেবি, সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীদের উপদ্রবের বিষয়ে তিনি বলেন, “এরকম কোন ঘটনা সম্প্রতি ঘটেনি। ছিনতাই ও হয়নি। শহরতলীতে বন আছে। মাদকসেবি আসতেও পারে। তারা আসলে আমাদের চক্ষুর অগুচরে আসা যাওয়া করতে পারে । আসেই না এটা বলাটা ও খুব কঠিন।