মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ইসরায়েল ও এর মিত্র দেশগুলোর কোমল পানীয় কোম্পানি কোকা-কোলা ও পেপসিকো এবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গাজা যুদ্ধের ইস্যু নিয়ে স্থানীয় কোমল পানীয়গুলোর কাছে ব্যবসা হারাতে বসেছে এই দুই কোম্পানি। ফুলে ফেঁপে উঠছে দেশগুলোতে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য। মিসরের বাজারে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ভি-সেভেন কোলা। এদিকে সৌদি আরবে জনপ্রিয় কোকা-কোলাকে ছাড়িয়ে গেছে ‘কিনজা’। জরিপ অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য মুসলিম বিশ্বে আন্তর্জাতিক পণ্যের দরপতন হয়েছে ৪ শতাংশ।
পণ্য বয়কটের এই ঝড়ে মিসরে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে দেশটির নিজস্ব কোমল পানীয় কোম্পানি ভি-সেভেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর রফতানি বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ। প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ নূর জানান, বিশ্বের ২১টি দেশে রফতানি হচ্ছে তাদের পানীয়টি। ভি-সেভেন আমরা ২০২৩ সালে বাজারে নিয়ে আসি। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পরই মিসরীয় মার্কেটে এর বিক্রি শুরু করেছি। আল্লাহর রহমত অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি। নজরে আসলো মানুষজন কোক-পেপসি বাদ দিয়ে আমাদের পণ্য কিনতেই বেশি আগ্রহী। গত ১ বছরে স্থানীয় মার্কেটে ভে-সেভেন বিক্রির পরিমাণ ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য দেশে রপ্তানির পরিমাণও বেড়েছে ৩০০-৩৫০ শতাংশ। একই চিত্র সৌদি আরবেও। দেশটির বাজারে কোকা-কোলাকে পেছনে ফেলে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে দেশি ব্র্যান্ড কিনজার। আবু ইসা হোল্ডিংয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাওয়াজ ইদ্রিসি বলেন, কিনজার মুনাফা কোকা-কোলার চেয়ে এখন বেশি। খুব শীঘ্রই পেপসির বাজারেরও দখল নিবে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও ওই দুই কোম্পানি আমেরিকার মালিকানাধীন হওয়ায় পাকিস্তান থেকে মিসরের মতো মুসলিম দেশগুলোতে বয়কটের মুখে পড়েছে তাদের ব্যবসা। মিসরে চলতি বছর কোকের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে স্থানীয় ব্র্যান্ড ভি-সেভেন মধ্যপ্রাচ্য এবং আরও কিছু অঞ্চলে গত বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি ব্যবসা করেছে।
এদিকে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে অর্থায়ন করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ের ওপর বিজ্ঞাপন প্রচার করে বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে কোক। এর প্রভাব পড়ে বাজারেও। স্থানীয় মোজো কোম্পানির পানীয় বিক্রি বেড়েছে এই সুযোগে। এক পর্যায়ে বিজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পেপসির ব্যবসাতেও ধস নেমেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
মুসলিম দেশগুলোর অনেকে অংশ নিয়েছেন কোকা-কোলা ও পেপসি বয়কটের আন্দোলনে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সবমিলিয়ে কোকা-কোলা ও পেপসি কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তার হিসাব করা কঠিন। এখনও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে বেশ ভালো ব্যবসা রয়েছে এই দুই প্রতিষ্ঠানের। পশ্চিমা পানীয় ব্র্যান্ডগুলোর ব্যবসা বছরের প্রথমার্ধে ৭ শতাংশ কমেছে।
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ডেলিভারি অ্যাপ ক্রেভ মার্টের প্রতিষ্ঠাতা কাসিম শ্রফ রয়টার্সকে বলেছেন, কোলা নেক্সট এবং পাকোলার মতো স্থানীয় কোমল পানীয়র বিক্রি ১২ শতাংশের মতো বেড়েছে। অথচ কোকা-কোলা ও পেপসির বয়কটের আগে এমনটা ছিল না।
প্রসঙ্গত, গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পরই কোকা-কোলা ও পেপসি বয়কটের ডাক ওঠে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে। কোকা-কোলা এইচবিসি–এর তথ্য অনুসারে, ২৮ জুন শেষ হওয়া ছয় মাসের হিসাবে মিসরে কোকের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অথচ গত বছরের এই সময়ের হিসাবে বিক্রি বেড়েছিল। পেপসিকো বলেছে, আমাদের ব্র্যান্ডগুলোর কোনোটিই সংঘাতে সরকার বা সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত নয়। আর কোকা-কোলার ভ্যাষ্য হলো, তারা ইসরায়েল বা কোনো দেশে সামরিক অভিযানে অর্থায়ন করে না।
আজ ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ১২:৫৮ | রবিবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি