মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ মাচায় ঝুলছে হলুদ রং এর তরমুজ। সাথে রয়েছে কেনিয়া ও রকমেলন/সাম্মাম। ঝুলন্ত হলুদ রং এর বাহারি তরমুজ দেখে মনে হচ্ছে হলুদের আভায় ছেয়ে গেছে সবুজ প্রকৃতি। তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের বারোমাসী তরমুজ, কেনিয়া ও সাম্মাম চাষ করে সাড়া তৈরি করেছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ভূবনঘর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সামসুল হক। তিনি ভূবনঘর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে। নতুন জাতের এই বারোমাসী তরমুজ ও সাম্মাম এক নজর দেখতে প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছেন সামসুল হকের খেতে। বাজারে ভালো চাহিদা ও দাম থাকায় এবং লাভজনক হওয়ায় নতুন জাতের এই বারোমাসী তরমুজ ও রকমেলন চাষে অনেক কৃষক আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
মুরাদনগর সদর হতে গোমতী নদীর ব্রীজ পাড় হয়ে বেড়ি বাধের পাশে ভূবনঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তার অদূরেই ৩৫ শতক জমিতে সামসুল হকের তরমুজখেত। ৫০ দিন আগে ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে এনে বীজ বপন করেন। এ পর্যন্ত জমি প্রস্তুত, সার, বীজ, মাচা, সুতা ও জাল বাবদ তাঁর খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। কয়েকদিন পরই তরমুজ খাওয়ার উপযোগী হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মালচিং পদ্ধতিতে বারোমাসী তরমুজ ও রকমেলন চাষ হচ্ছে। মাচায় ঝুলছে হলুদ তরমুজ, কেনিয়া আর সাম্মাম। সবুজ পাতার মধ্যে যেদিকে চোখ গেছে, শুধু হলুদ তরমুজ আর সাম্মাম ঝুলতেই বেশী দেখা গেছে। সামসুল হক ও তাঁর সহকর্মী জমিতে গাছের পরিচর্যা করছিলেন।
কৃষি উদ্যোক্তা সামসুল হক বলেন, “আমাদের ভুবনঘরের মাটিতে তরমুজ হয় না, এই কথাটি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। কিন্তু কেউ চেষ্টা করে দেখেনি। করোনার মহামারির কারনে ব্যবসা বানিজ্য প্রায় বন্ধ বললেই চলে। মনে মনে ভাবলাম বসে থেকে কি লাভ, কৃষিতে একটু মনোযোগ দেওয়া যাক। আমি ইউটিউব দেখে বারোমাসী তরমুজ, কেনিয়া আর সাম্মাম চাষ করার উদ্যোগ নিই। যেই ভাবনা সেই কাজ। ৩৫ শতক জমি বন্ধক নিয়ে ঢাকা থেকে বীজ ও মালচিং পেপার সংগ্রহ করে বারোমাসী হলুদ তরমুজ, কেনিয়া ও দুই জাতের সাম্মাম নিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। কৃষি বিভাগ আমাকে সহযোগিতা করছেন। হলুদ তরমুজের গায়ের রং হলুদ হলেও ভেতরে লাল টকটকে। শিলাবৃষ্টি না হলে ও বৈরী আবহাওয়া না থাকলে ভালো টাকা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাইনুদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, “বারোমাসী হলুদ তরমুজ ও রকমেলনের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি, খেতেও মিষ্টি। সারা বছর চাষ করা যায়। এগুলো এতোদিন বিদেশে চাষ হতো। সম্প্রতি বাংলাদেশের কিছু কৃষি উদ্যোক্তা এ বারোমাসী তরমুজ চাষ করছেন। সামসুল হক একজন কৃষি উদ্যোক্তা। এর আগেও নতুন জাতের সবজি স্কোয়াশ ও ব্রোকলি চাষ করে ভালো সফলতা পেয়েছেন এবং স্কোয়াশ চাষে কৃষকদেরকে আগ্রহী করে তোলেছেন। তাঁর আগ্রহ থেকেই মুরাদনগরে এই প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে হলুদ তরমুজ ও রকমেলনের। আশা করছি সামসুল হক আর কয়েকদিন পর এই অঞ্চলে নতুন সফলতার গল্পের সূচনা করবেন। আমরা তাঁর সঙ্গে আছি। যেসব কৃষক এই জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে আমাদের কাছে আসবেন আমরা তাদের কারিগরি সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাব।’’