মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর। ১৯২১ সালে কবি তাঁর বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে ওই গ্রামে আসেন। এখানে তিনি ২ মাস ১১ দিন ছিলেন। এ গ্রামেই তিনি আলী আকবরের বোনের মেয়ে নার্গিস বেগমের সঙ্গে প্রেম করেছেন। সেই দৌলতপুরের খানবাড়ির সব কিছুই এখন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে।
মুরাদনগরে কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে সামনে এগোলেই দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে ‘নজরুল তোরণ’। এর দুই পাশে ইট-সিমেন্টের তৈরি কালো রঙের টুকরো টুকরো বোর্ডে সাদা কালিতে লেখা কবির সৃষ্টি। ওই পথ ধরে আধা কিলোমিটার ভেতরে গেলেই খানবাড়ি। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে। এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজ-শোভিত দোতলা বাড়ি। এ বাড়িতেই থাকতেন কবি নজরুল। বাড়িটির পলেস্তারা খসে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হচ্ছে না। ভবনের পেছনে বাঁশঝাড় পার হলেই কবির স্মৃতিবিজড়িত বাসরঘর। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরেই ছিল নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক। সিন্দুকটি এখন আর নেই। কোথায় আছে তা-ও কেউ বলতে পারে না। একসময় ওই ঘরে বাসর খাটটিও ছিল। এখন সেটি পাশের একটি আধপাকা ঘরে রাখা হয়েছে।
খান বংশের উত্তরসূরি বাবলু আলী খান বলেন, এ বাড়ির পুকুরঘাটের আমগাছের তলায় কবি দুপুরে শীতলপাটিতে বসে গান ও কবিতা লিখতেন। খানবাড়ির ছেলেমেয়েদের নাচ, গান আর বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাতেন। পুকুরে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছও শিকার করতেন। কবির সেই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে সেখানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অনুষ্ঠান করে থাকে। তবে বছরের অধিকাংশ সময় এই মঞ্চে গরু চরানো হয়।
জানা গেছে, দৌলতপুরে নার্গিস-নজরুল বিদ্যানিকেতন, নজরুল নিকেতন পাঠাগার, নজরুল-নার্গিস শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল তোরণ রয়েছে। এ ছাড়া মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের নাম কবি নজরুল মিলনায়তন করা হয়েছে। এর বাইরে কোনো স্মৃতিচিহ্নই নেই।
এদিকে কুমিল্লা নগরে ১৯৮৩ সালে খোদাই করা স্মৃতিফলকগুলোর লেখা মুছে যাচ্ছে। কুমিল্লা নগরের ঝাউতলা, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখার পূর্ব-দক্ষিণ কোণ, নজরুল অ্যাভিনিউ, ফরিদা বিদ্যায়তন, দারোগাবাড়ি, ঝানু মিয়ার বাড়ি, শচীন দেব বর্মণের বাড়ি, বসন্ত স্মৃতি পাঠাগার ও প্রমীলার বাড়িতে কবির কয়েকটি স্মৃতিফলক রয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নজরুল অ্যাভিনিউ ও ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ এলাকার স্মৃতিচিহ্ন নতুন আঙ্গিকে তৈরি করেছে। অন্যগুলো আগের মতোই পড়ে আছে।