মোকাদ্দেস লিটু, ডোমার, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ ৫৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আজ ১ লা জুন ২০২২ বহুল প্রতিক্ষিত মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতের পশ্চিম বঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন থেকে ছেড়ে এসে প্রায় ৬৯ কিঃমিঃ ভারতীয় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বুধবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা নীলফামারীর চিলাহাটি রেল ষ্টেশনে পৌঁছায়।
এ সময় চিলাহাটি রেল স্টেশন ও বাজার এলাকায় উৎসুক জনতায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ২০ মিনিট বিলম্বে আসা ট্রেনটি প্রায় ৩৫ মিনিট চিলাহাটি ষ্টেশনে যাত্রা বিরতির পর ২টা ৪৫ মিনিটে ১০টি র্যাক নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ১টি ইঞ্জিন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ট্রেনটি চিলাহাটি রেলওয়ে ষ্টেশনে আসার পর বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের মহাব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদার ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষকে অভিবাদন জানান। এ সময় তারসাথে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিওপিএস শহিদুল ইসলাম, সিসিএম আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া, সিই কুদরত-ই-খুদা, সিএমই মনিরুজ্জামান ফিরোজ, সিইই সফিকুল ইসলাম, সিসি/ আরএনবি আসাবুল ইসলাম, ডিআরএম শহিদুল ইসলাম, ডিইএন/২ আব্দুর রহিম, ডিএমই/ লোকো তাপস কুমার।
অপরদিকে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি জলপাইগুড়ি থেকে নিয়ে আসে ভারতীয় রেলের ট্রেন পরিচালক কৌশিক ঘোষ, লোকো মাষ্টার বিবেকানন্দ চৌধুরী ও সহকারী লোকো মাষ্টার রাকসান কুমার।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের মহাব্যবস্থাপক অসিম কুমার জানায় মোট ১০টি র্যাক নিয়ে বাংলাদেশে আসে ট্রেনটি। এর মধ্যে ৪টি এসি বাথ, ৪টি এসি চেয়ার, ১টি পাওয়ার ভ্যান ও ১টি ব্রেক ভ্যান। সূত্র আরো জানায়, ঢাকা থেকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি রেল ষ্টেশন পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয় এসি বাথ প্রতিজন ৫ হাজার ২৫৫ টাকা, এসি সিট ৩ হাজার ৪২০ টাকা, এসি চেয়ার ২ হাজার ৭৮০ টাকা।
আজ বুধবার মোট ১৮ জন যাত্রী নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে মিতলী এক্সপ্রেস। এদের মধ্যে ১৩ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও ০৫ জন ভারতীয় নাগরিক আসেন।
বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম ও ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ভার্চুয়ালি ট্রেনটির উদ্বোধন করেন ভারতের দিল্লী থেকে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চলের মহা-ব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদার বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের ভিসাসহ অন্যান্য জটিলতার অবসান হওয়ায় পহেলা জুন থেকে মিতালী এক্সপ্রেস যাত্রীবাহি ট্রেনটি দিনে ৪৫৬ জন রাতে ৪০৮ জন যাত্রী নিয়ে ভারত সীমান্তের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের নীলফামারীর চিলাহাটি হয়ে ঢাকা ক্যান্টমেন্ট পর্যন্ত চলাচল করবে। এই ট্রেনটি সপ্তাহে দু’দিন রবিবার ও বুধবার চলবে জলপাইগুড়ি থেকে। আর বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টমেন্ট থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার চলাচল করবে।
যাত্রীবাহি মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে রংপুর বিভাগের পাসপোর্টধারী যাত্রীর জন্য দুটি কোচ বরাদ্দ থাকলেও আপাতত চিলাহাটি ষ্টেশনের অবকাঠামো কাস্টম এমিগ্রেসন না থাকার কারনে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা চিলাহাটি থেকে যাতাযাত করতে পারবে না। শুধু মাত্র ঢাকা ক্যান্টমেন্ট ও ভারতের নিউ জলাপাইগুড়ি (এনজেপি) থেকে যাত্রী যাতাযাত করতে পারবে। এই ট্রেনে ভ্রমণকারী যাত্রীদের অবশ্যই কোভিড-১৯’র টিকা গ্রহনের সনদ থাকতে হবে।
গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ-ভারত মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলাচলের ভার্চুয়াল উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উল্লেখ্য দীর্ঘ ৫৮ বছর ধরে বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ-ভারত রেলপথটি পুনরায় চালু হলো।