মা দিবস উপলক্ষে অনেকের লেখা পড়লাম। ভালোই লাগলো পড়ে। মা’কে হারিয়েছি কয়েক বছর হয়ে গেল। দেশে গেলেই মা ফোন করে বলতেন বাড়িতে আসবা কখন! তাড়া থাকত বাড়ী গিয়ে মা’কে সালাম করার। আব্বা চলে গেছেন আরও দু’বছর আগে। মা প্রায়ই বলতেন “সৎ থাকা আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অভ্যাস করা কঠিন কাজ”। এখন আর অমন করে কেউ বলেনা। শেষ বার মা’কে যখন দেখেছি মা তখন ঠিকমত হাঁটা চলা করতে পারেননা। আমার দেশে যাওয়ার সংবাদ পেলেই অস্থির হয়ে উঠতেন। মা’র পছন্দের খাবার আর এক বিড়া পান নিয়ে গেলে খুশিতে আঠখানা হয়ে উঠতেন। শেষবার যখন গেছি দুপুরে খেতে বসেছি। হঠাৎ দেখি মা লাঠিতে ভর করে এসে টেবিলের সামনে দাড়িয়েছেন। আমি উঠে গিয়ে মা’কে ধরে একটা চেয়ারে বসালাম। জিজ্ঞেস করলাম ” মা কিছু বলবেন?” মা আমার প্লেটের দিকে চেয়ে বললেন ” না তুমি খাও আমি দেখি!”। ছোট ভাইয়ের বউকে বললেন “ওকে আরও গোস্ত দাও”। আমি খাচ্ছি আর মা আমার মূখের দিকে ফ্যল ফ্যল করে চেয়ে রইলেন। কি যেন সুখ অনুভব করছেন ছেলেকে সামনে বসে খেতে দেখে! খাওয়া শেষ করে আমি মা’ক জড়িয়ে ধরে আদর করলাম। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন ” এখনত আমি আর রান্নাবান্না করতে পারিনা। তোমরা বিদেশে কি খাও না খাও দেখতেও পারিনা!” একমাত্র মা’ই জানেন তার সন্তান কি খেতে পছন্দ করে। মনে আছে সন্ধ্যায় যখন ঢাকায় রওনা হব মা তখন শুয়ে আছেন। আমি মা’র মাথায় হাত রেখে বললাম ” মা আমাকে মাফ করে দিবেন! মা করুন দৃষ্টি মেলে কিছুক্ষন চেয়ে রইলেন। তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন ” যাও চিন্তা করিওনা তুমি তো মসজিদ বানিয়েছো!”। এটাই ছিল আমার মায়ের শেষ আশির্বাদ।
ফেরার এক মাসের মাথায় একদিন ফোন এলো। আমি তখন দোকানে যাচ্ছিলাম একটা ফোন কার্ড কিনতে, মা’কে ফোন করবো বলে। ভাগ্নার কন্ঠ শুনেই বিচলিত হয়ে জিঙ্গেস করলাম মা কেমন আছেন। ভাগ্নে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। ভাগ্নের নিরবতাতেই বুঝে গেছি আমার মা আর নেই। রাস্তার উপর একটি বেঞ্চে বসে পরেছি। চোখ বুঝে মায়ের মুখখানি অনুমান করে বলে উঠেছি “মা আমাকে কিছু না বলে এভাবে…..। সিনেমার পর্দার মত সব স্মৃতি ভেসে এলো আর অস্ফুট কন্ঠে বেড়িয়ে এলো- আমি এতিম হয়ে গেলাম। এখন বাড়ী গিয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মা’কে প্রানভরে ডাকি- উত্তর আসেনা। জানিনা আমার মা কেমন আছেন! দিবসটির উদ্ভাবক কে জানিনা তবে মা শুধু একটি দিবসের জন্য নয়। প্রতিটি মা সন্তনের জন্য আশির্বাদ- আমার প্রেরণা। মাগো তোমাকে খুব ভালোবাসি গো মা।
আজিজুর রহমান প্রিন্স, কলামিস্ট ও আওয়ামীলীগ নেতা, টরন্টো, কানাডা।